রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে মেয়েদের একটি পার্লারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লিপি আজিম। নেত্রকোনার বিরিশিরি এলাকার মেয়ে তিনি।
প্রায় ১২ বছর ধরে পার্লারে কাজ করছেন তিনি। অন্য পেশার মত আট ঘণ্টা কাজ,সাপ্তাহিক ছুটি,বেতন সব মিলিয়ে ভাল চলছে তেমনটি বলছিলেন।
লিপির মত এই পার্লারে আরো ৩৫জন মেয়ে কাজ করছেন বিভিন্ন সেকশনে। তবে তাদের মধ্যে ২৫ জন মেয়ে গারো সম্প্রদায়ের।
অন্য অনেক পেশা থাকতে পার্লারে কাজ করাটাকে তারা কেন স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন?
মনি আরেং-এর পরিবারের পাঁচজন নারী সদস্য কাজ করছেন ঢাকার বিভিন্ন পার্লারে। তিনি বলছিলেন কর্মস্থল হিসেবে নিরাপত্তার দিকটা চিন্তার করলে পার্লার তার কাছে নিরাপদ কর্মস্থল বলে মনে হয়েছে।
তিনি বলছিলেন "নিরাপত্তা বড় একটা জিনিস। বাসা বাড়িতে বা গার্মেন্টসে কাজ করতে ইচ্ছা করে না। এখানে সবাই মেয়ে, মেয়েরা আসে সেবা নিতে, বস মেয়ে, তাই কাজ করতে কোন সমস্যা হয় না।"
মাতৃ-তান্ত্রিক গারো সমাজে পরিবারের প্রধান ব্যক্তি হন নারী। তাই ঘরে ঘরে প্রত্যেক নারীকে অর্থ উপার্জন করতে হয় সংসার চালানোর জন্য।
তারা যেমন পার্লারে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ তেমনি এখানে যেসব নারীরা সেবা নিতে আসছেন তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই মেয়েরা।
মিরপুরের একটি পার্লারে কথা বলছিলাম সেখানে সেবা নিতে আসা উম্মে রেমোনার সাথে।
তিনি বলছিলেন "আমি যে পার্লারেই যাই না কেন সব খানেই দেখি তারা বেশি। আমারো ভালো লাগে ওদের কাছ থেকে সেবা নিতে। কারণ ওরা কাজ করে নিখুঁত এবং ভীষণ দক্ষ।"
ঢাকার বেশির ভাগ পার্লারে যেসব মেয়েরা কাজ করেন তাদের অধিকাংশ বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। তবে পার্বত্য অঞ্চল রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের মেয়েরা খুব একটা আসেন না এই পেশায়।
সে তুলনায় ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মেয়েদের অনেকের পছন্দের পেশা পার্লারে কাজ।
হারমনি স্পা-প্রধান নির্বাহী রাহিমা সুলতানা বলছিলেন তার স্পা ও সেলুন সেকশনে অধিকাংশ মেয়ে গারো সম্প্রদায়ের। তাদের নেয়ার কয়েকটি কারণ তিনি উল্লেখ করছিলেন এভাবে।
তিনি বলছিলেন "প্রথমত তারা কর্মঠ, দ্বিতীয় তারা সৎ।"
"আর কাজের প্রতি একনিষ্ঠ-যেটা আমার ভালো লাগে," রাহিমা সুলতানা।
তিনি বলছিলেন "এখন বিউটি ইন্ডাস্ট্রি হয়ে গেছে, এখানে ওরা ভালো আয় করতে পারছে, পড়াশোনা কম হলেও সমস্যা নেই। আর তারা একজন যখন এই পেশায় আসে তখন পরিবার, প্রতিবেশী আরো অনেককে নিয়ে আসে। কারণ তারা নিজেদের দিয়ে একটা নিরাপত্তার বলয় তৈরি করতে চায়।"
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঠিক কত মেয়ে এই পেশায় রয়েছেন তার কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে রাজধানীর ছোট-বড় পার্লারগুলো ঘুরলে সেখানকার অধিকাংশ কর্মী যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সেটা সহজেই চোখে পড়ে।
mongsai79@gmail.com
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment