রোয়াংছড়িতে এডিপি’র প্রকল্পের কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ


বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় সুপেয় পানি সরবরাহের এডিপি প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি ও টাকা আত্নসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০১৬-১৭ অর্থ সালে এডিপি প্রকল্পে আওয়াতায় রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে জনস্বার্থে জনগণের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহের ও অনুমোদনকৃত ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নে লক্ষ্যে রোয়াংছড়ি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) অফিসের অসাধুপায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঠিকাদার সাথে যোগসাজশে মনগড়া কোটেশনের মাধ্যমে রোয়াংছড়ি মেসার্স অথুইমং মারমা নামে লাইসেন্স দিয়ে কাজ নেন ঠিকাদার রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহ্লামং মারমা।
সরকারি নীতি মোতাবেক স্থানীয় পত্রিকার বা জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোন নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা দীর্ঘ দিন ধরে অনিয়ম করে আসছে এমন অভিযোগ স্থানীয় জনসাধারণের।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, (সিও) সহকারী প্রকৌশলী মো: সাজেদুল ইসলাম সরাসরি জড়িত বলে এমন অভিযোগ উঠেছে। ওই কাজে তিনি দেখভাল করার দায়িত্ব ছিলেন। সাজেদুল ইসলাম প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন ছাড়াই ঠিকাদার সাহ্লামং মারমা সাথে মিলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে দিচ্ছেন।
নাম না বলার শর্তে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এলজিইডি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ঝিরির পানি পান করে ডায়রিয়া,আমাশয়,ম্যালরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ।
তাই রোয়াংছড়ি সদর ইউপির চেয়ারম্যান চহ্লামং মারমার সহায়তায় সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ২০১৬-১৭ অর্থ সালে এডিপি প্রকল্পে আওয়াতায় বরাদ্দ পেয়েছি। এডিপি প্রকল্পগুলো প্রায় অর্থ আত্নসাত ছাড়া কোন কাজ ঠিক মতোই হয়নি। এছাড়া আরো সাহ্লামং মারমা ইউপির চেয়ারম্যান থাকা কালে ২০১৫-১৬ অর্থ সালে শেষ দিকে এলজিএসপি বরাদ্দ প্রায় সতের (১৭) লক্ষ টাকা কোন কাজ ছাড়াই তাও আত্নসাত করা হয়েছে।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করলে সমস্ত নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্নসাতের অপকর্মগুলো উঠে আসবে। এদিকে এলাকার লোকজন পানি সংকটের এমন অবস্থা দেখে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম ও ঠিকাদার সাহ্লামং মারমা মিলে প্রকল্প টাকাগুলো ভাগ বাটওয়ারা করে ইতোমধ্যে ঝিরির পানি সরবরাহকৃত পুরানো পাইপ লাইনকে সামান্য মেরামত করে নতুন করেছেন বলে প্রকল্প ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
প্রকল্প টাকা আত্নসাতের ঘটনাটি জানাজানি হলে আন্দোলন মুখি হয়ে পড়েন এলাকার জনগণ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম জানান, ওই সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যাপারে জানেন না। আমাদের কাছে কোন অবহিত করা হয়নি। বরং আমাদের অফিসের মাধ্যমে ১০ বছর পূর্বে বাঘামারা ঝিরি থেকে সরবরাহকৃত পাইপ লাইনকে দেখিয়ে বিল ভাউচার করে পেমেন্ট করছে বলে দাবি করেন। তবে এধরনের ভুয়া বিল ভাউচার করা বা কাজ ছাড়াই বিল পেমেন্ট করা বোধগম্য নয়।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ক্যসাইনু মারমা ও রোয়াংছড়ি সদর ইউপির চেয়ারম্যান চহ্লামং মারমা বলেন, মনে করেছিলাম এই প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার জনগণের অনেক দিনের আশায় পূরণ করতে যাচ্ছে কিন্ত এভাবে ঠকাবে জানতাম না। দীর্ঘ দিন ধরে বিশুদ্ধ পানির জন্য সাধারণ জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা সকলে মিলে ২০১৬-১৭ অর্থ সালে এডিপি প্রকল্পে আওয়াতায় বরাদ্দ দাবি করে অনুমোদন পেয়েছি তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা কোন কাজ না করেই সমস্ত টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। এমন হতে পারে না। এলাকার জনগণের প্রাপ্য,জনস্বার্থে কাজটি বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লাইসেন্স মালিক আথুইমং মারমা বলেন, আমার লাইসেন্সটি আরেকজনকে দিয়ে ছিলাম সাহ্লামং মারমাকে দিইনি।
ঠিকাদার সাহ্লামং মারমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠো ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সিও সাজেদুল ইসলাম বলেন ঠিকাদারকে বিল পেমেন্টের আগে কর্ম এলাকার নির্বাহী অফিসারসহ পরিদর্শন করেছে। পরে কাজ ঠিক থাকাতে বিল পেমেন্ট করা হচ্ছে এবং কাজও ৮০ পার্সেন্ট হয়েছে দাবি করেন তিনি।
নির্বাহী অফিসার রবীন্দ্র চাকমা বলেন, এ বিষয়ে তেমন জানতাম না,আমাকে ভুল বুঝিয়ে প্রকল্প টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
mongsai79@gmail.com

Comments