থানচিতে ১৭ লাখ টাকার গোলঘর

থানচিতে ১৭ লাখ টাকার গোলঘর

একটি টিনশেড গোলঘর নির্মাণ করতে ১৭ লাখ টাকা খরচ করেছে বান্দরবানের থানচি উপজেলা প্রশাসন। এ জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অধীনে তিনটি এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে একটি প্রকল্প দেখানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাগজপত্রে উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায় ইউ টি মং কার্যাদেশ পেয়েছেন। বাস্তবে প্রকল্পের কাজ করেছেন থানচি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রোকন মিয়া। একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে তিনি কিভাবে ঠিকাদারি কাজ তত্ত্বাবধান করেন, তা জানা যায়নি।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে সম্পাদিত প্রকল্পের তালিকা অনুযায়ী থানচি উপজেলার গোলঘর পুনর্নির্মাণ (প্রথম অংশ), পুনর্নির্মাণ (দ্বিতীয় অংশ) এবং থানচি বাজার মসজিদের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছেন ইউ টি মং। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের তালিকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শতভাগ শেষ দেখিয়ে প্রতিটি প্রকল্প পাঁচ লাখ টাকা হিসেবে ইউ টি মংয়ের অনুকূলে অর্থ পরিশোধ দেখানো হয়। কিন্তু কথিত কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইউ টি মং মারমা জানিয়েছেন, এসব প্রকল্পের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
কালের কণ্ঠকে ইউ টি মং মারমা বলেন, ‘ছোট কোনো প্রকল্পের বিপরীতে টেন্ডার দিই না। কিভাবে আমার নামে এসব কাজ দেওয়া হয়েছে, তা উপজেলা প্রকৌশলীই জানেন। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্ণিত কাজের অনুকূলে ইস্যু করা কোনো সরকারি চেক ভাঙানো/উত্তোলন করার জন্য নিজ অ্যাকাউন্টের কোনো উইথ ড্র চেক কাউকে দিইনি।
ট্রেজারি থেকে কিভাবে এসব প্রকল্পের চেক তোলা হয়েছে, এর কিছুই জানি না। ’
থানচি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের জমিতে সেতুসংলগ্ন চারপথের মোড়ে গোলঘরটির অবস্থান। এর নাম দেওয়া হয়েছে জনসেবা কেন্দ্র। পাঁচ ইঞ্চি ইটের দেয়ালের ওপর টিনশেড। পুনর্নির্মাণ খাতে তিনটি প্রকল্প ছাড়াও থানচি বাজার মসজিদের রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্পে দুই লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এই প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে মো. সেলিম রেজার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. সেলিম রেজা। তাঁর নামে তিন্দু ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সরবরাহ প্রকল্পও রয়েছে। এ প্রকল্পে এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, গ্রোপিং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া তিন্দু ইউনিয়নে অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেং ঙেং ম্রো বলেন, ‘কোনো কম্পিউটার পাইনি। ’ প্রধান শিক্ষক পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘তিন্দু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো পৌঁছেনি। কবে পৌঁছবে, তা কেউ জানে না। তাই কম্পিউটার দিয়ে কী করব?’
mongsai79@gmail.com

Comments