পাহাড়িরা কি এদেশের নাগরিক নয়?-তসলিমা নাসরিন

 
বিশিষ্ট নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন,
খুব ভালো করে আমার জানা ছিল না পাহাড়ে কী হচ্ছে। আমার আগের পোস্টের কমেন্টে রোদ্দুর শুভ্র বলেছিল পাহাড়ে যা হচ্ছে একাত্তরের বর্রবরতা হার মানবে। একাত্তরের সঙ্গে তুলনা করায় আমি তিরস্কার করেছি রোদ্দুরকে। তখন এলো চন্দনা চাকমা, পাহাড়ি মেয়ে, আমার কিশোরীবেলার বন্ধু। লিখলো ---

''পানছড়ি লংগদু নানিয়ারচর কাউখালি আরও বিভিন্ন এলাকায় সংগঠিত পাহাড়ি সংখ্যালঘুদের জানমালের উপর নানা অত্যাচার, আক্রমণ, ধর্ষণ, হত্যাকান্ডগুলি কোনো সালের তুল্যবিচারে নয়, প্রশ্ন শুধু বল্ দেশে কি এজাতীয় কোনো আইন পাস করা হয়েছে যে সংখ্যালঘু পাহাড়িদের আক্রমণ করে নির্বিচারে হত্যা কর, ঘরবাড়ী দোকানপাট পুড়িয়ে দাও, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ কর, ধর্ষণ কর??? অবশ্য বিচার চাওয়াটাও একটা প্রহসন। যেন পাহাড়িরা গনিমতের মাল যা ইচ্ছা তাই কর। বেটে নাও কেটে নাও মেরে ফেল। সেটেলাররা সুপরিকল্পিত প্ল্যানের একটি অংশ মাত্র।

৫০০০ হাজার সেটেলারকে প্ল্যান্ট করেন মেজর জিয়া। পূর্ণ মদদে তো সরকারীবাহিনী তখনও ছিল এখনও আছে। কাউখালি ম্যাসাকার ছিল তেমনই একটি । হাজার হাজার পাহাড়িকে হত্যা করা হয়। যারা প্রাণে বেঁচে যান প্রাণটা হাতে নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নেন রিফ্যুজি হিসাবে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় কতশত পরিবার। তাদের এতবছরের রেডিমেড ভিটেমাটি জমিজমা সব দখল করে সেটেলাররা। এইসব ভয়াবহতার যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারা ৭১ এর সমতুল্য খোঁজার চেষ্টা তো করতেই পারেন। কারণ চাক্ষুষ দেখা ঐ একটি অবিস্মরণীয় কালই তো তারাও দেখেছেন একই দেশের নাগরিক হিসাবে।

আচ্ছা সুশীল সমাজ আপনারা বলুন পাহাড়িরা কি এদেশের নাগরিক নয়? তারাও কি কম বেশি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি? তাদের কি নিজর দেশে শান্তিমতো বাস করবার অধিকার নেই ? তাদের কি পুনরায় সত্তর থেকে আশির দশকের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছেনা? একটা মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হয় হবেই।প্রশ্নটা কয়েকশ' ঘরবাড়ী কিংবা কয়েক হাজার অথবা কয়েক লক্ষ ঘরবাড়ীর নয়।

ফারাক শুধু লঘুত্বের আর গুরুত্বের। পাহাড়িরা সংখ্যায় আছেই বা কয় লক্ষ। বর্তমান সময়ে বলে নয় আমরা ছোট ছিলাম যখন তখনও দেখেছি স্বাধীনতাত্তোর আশির দশকে এলাকার স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের বিভিন্ন বয়সী চাকুরীজীবীদেরও ধরে নেয়া হতো যখন তখন । জিজ্ঞাসাবাদের নামে অত্যাচার করা হতো আটকে রাখা হতো। প্রশ্ন একটাই, শান্তিবাহিনী কিধার হ্যায়?শুধু এবারে প্রশ্নকর্তা বাংলাদেশী আর মুক্তি শব্দটির কেবল পরিবর্তন হয়েছে মাত্র।''আমি হতবাক বসে আছি।
মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments