ভূমি হারিয়ে দিশেহারা চাক সম্প্রদায়

 ভূমি হারিয়ে দিশেহারা চাক সম্প্রদায় (ভিডিও)
ছবিটি পরিবর্তন নিউজ হতে সংগ্রহকৃত:

কয়েক বছর আগেও পাহাড়ে জুম চাষ ও বিভিন্ন ফলমূলের বাগান করে সংসার চালাতেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীর বাদুর ঝিড়ি চাক পাড়ার বাসিন্দা উক্যহ্লা চাক। কিন্তু এখন তার কোনো জমিই নেই।
পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে যে জমিটুকু পেয়েছিলেন তাও দখল হয়ে গেছে। প্রভাবশালী দখলদাররা রাবার বাগানের জন্য ভূমি লিজ নিয়ে উক্যহ্লা চাকের জায়গাটুকুও দখল করে নেয়। সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব উক্যহ্লার সংসার চলে এখন দিনমজুরি করে।
উক্যহ্লা চাকের মতো বাইশারীর অনেক চাক সম্প্রদায়ের আজ এখন একই অবস্থা। যুগের পর যুগ ধরে যে জায়গা-জমিতে তারা বসবাস করতেন আজ তারা সব হারিয়ে নিঃস্ব।
ভূমি দস্যুদের কারনে উচ্ছেদ হয়ে গেছে বাইশারী ইউনিয়নের অনেক চাক পাড়া। একের পর এক ভূমি হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী।
ভূমি দস্যুদের অপতৎপরতা, প্রভাবশালীদের চাপ ও অব্যাহত হুমকির মুখে আতংক উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে চাক সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা।
শুধু তাই নয়, পূর্ব পুরুষদের ভিটে মাটি রক্ষা করতে এখন রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। ভূমি দখল আর হামলায় মনোবল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী।
পার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসকারী ১১ আদিবাসি জনগোষ্ঠির মধ্যে চাক সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় ৩ হাজারের মত। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইাশারী ও তার আশেপাশের কিছু এলাকায় চাকদের বসবাস।
শত শত বছর ধরে পাহাড়ী জমিতে জুম চাষ ও চাষাবাদ করে চাকরা জীবন নির্বাহ করে আসছেন। ১৯৮৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বান্দরবানের বিপুল পরিমাণ পাহাড়ি জমি রাবার ও হর্টিকালচারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লিজ দেওয়া শুরু করে প্রশাসন।
এ সুযোগে প্রভাবশালীরা দখল করে নেয় বাইশারীর চাক সম্প্রদায়ের জুমের জমি। এরপর থেকেই দুর্ভোগ দুর্দশা নেমে আসে চাকদের জীবনে।
পূর্ব পুরুষদের জায়গা-জমি একের পর এক বেদখল হয়ে যাওয়ায় সংকটের মুখে পড়েছে চাক সম্প্রদায়।
চাক সম্প্রদায়ের কারবারী অংথোই চিং চাক পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বাইশারী ইউনিয়নে শত শত একর জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। এসব জায়গায় চাকরা জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তবে সরকারের ভূমি লিজ ও প্রভাশারীদের দৌরাত্মের কারণে এসব জায়গা এখন বেদখল হয়ে গেছে। চাকরা এখন তাদের পূর্ব পূরুষদের জায়গায় জুম চাষ করতে পারছেনা। শুধু তাই নয় ভূমি দখল করতে চাকদের পাড়া থেকেও উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, যারা যেতে চায়না তাদের নানাভাবে ভয় ভীতি দেওয়া হচ্ছে। দুর্গম এলাকার পাড়াগুলোতে ডাকাতি ও হামলা করা হচ্ছে। পাড়া ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
চাক নেতা মংমং চাক জানান, মাত্র ৩ হাজার জনসংখ্যার একটি সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। তারা প্রভাবশালীদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। বাধ্য হয়ে চাকরা জায়গা জমি ছাড়ছে। অনেককে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রশাসন এগুলো জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
শুধু জায়গা জমি হারানোই নয়, চাকদের উচ্ছেদ করতে তাদের বসতবাড়ি এমনকি ধর্মীয় নেতাদের উপর হামলার অভিযোগও করেন তারা।
গত বছরের ১৪ মে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় চাক সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ ভিক্ষুকে। এরপর একাধিকবার চাক পাড়া ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। হুমকি-ধামকি ও অব্যাহত হামলার ঘটনায় চাক সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা আতংক উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
আদিবাসি নেতারা বলছেন এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর অস্বিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।
বান্দরবানের বোমাং রাজা উচ প্রু চৌধুরী জানান, চাক জনগোষ্ঠীর জায়গা-জমি দখলের নানা অভিযোগ এলাকার মৌজা প্রধানরা বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছে। প্রশাসনের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এলাকার লোকজন সচেতন হলে সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, চাক সম্প্রদায়সহ অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত ভূমি রক্ষায় প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অভিযোগ আসা মাত্রই তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments

Post a Comment

Thanks for you comment