আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট পুলিশের বেশ কিছু চৌকিতে হামলার পর থেকে সেখানে ৬০টির বেশি গ্রামে দুই হাজার ছয়শ'র বেশি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্রপন্থি বৌদ্ধরা এসব অপরাধ করেছেন। তবে দেশটির সরকারি তথ্য কমিটি বলছে, এসব গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগে মুসলিম জঙ্গিরা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া রাখাইনের অনেক ছবি ও খবরে মুসলিম জঙ্গিদের হাতে আরাকানি, ম্রো বৌদ্ধ ও রাখাইন হিন্দুদের নিহত বা আহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে এবং জঙ্গিদের প্রতি ভীতির কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মুসলমানরা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী, জঙ্গি ও বৌদ্ধদের নিয়ে তাদের ভীতির কথা জানাচ্ছেন।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই সেখানে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে ইরাবতীর রিপোর্টারসহ একদল সাংবাদিককে রাখাইনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সেখানে যাওয়ার পর দেখা যায়, মুসলমান অধ্যুষিত গাওডু জারা গ্রামসহ নতুন করে আরও অন্তত দুটি গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওইদিন জ্বলতে থাকা ময়াংডোর পরিত্যক্ত একটি গ্রামে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে স্থানীয় অমুসলিম অধিবাসীদের ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। সেখানে তাদের এই উপস্থিতি সন্দেহের উদ্রেক ঘটিয়েছে যে, কেন তারা সেখানে অবস্থান করছে? এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে বার্মিজ ভাষায় তারা জবাব দেয়— 'গ্রামটিতে কী হয়েছে তা দেখতে এসেছি।' এছাড়া আর কোনো কথার জবাব দেয়নি তারা।
সে সময় তাদের অনেককে সেখানে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন বাড়ি থেকে গৃহস্থালি সামগ্রী নিয়ে যেতে দেখা যায়। পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ি থেকে আরেকটি বাড়িতে হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের কারো কারো হাতে ছুরি ও গুলতি দেখা গেছে।
সে সময় তাদের অনেককে সেখানে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন বাড়ি থেকে গৃহস্থালি সামগ্রী নিয়ে যেতে দেখা যায়। পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ি থেকে আরেকটি বাড়িতে হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের কারো কারো হাতে ছুরি ও গুলতি দেখা গেছে।
একটি মাদুর, কয়েকটি বালতি ও রান্না কাজে ব্যবহৃত কিছু চামচসহ লুট করা গৃহস্থালী মালামাল নিয়ে চলে যেতে উদ্যত কয়েকজনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইরাবতীর সাংবাদিকদের তারা বলেন, 'মুসলমানদের পরিত্যক্ত বাড়িগুলো থেকে এগুলো নিয়েছি।' তবে বাড়িগুলোতে আগুন দেওয়ার কথা তারা স্বীকার করেনি।
গ্রামটির রাস্তা ধরে আরও এগিয়ে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের দলটি নতুন করে জ্বালিয়ে দেওয়া কয়েকটি বাড়ি দেখতে পায়। ওই বাড়িগুলোর কাছেই রাস্তার ওপর জ্বালানি তেলের একটি জগ ও দিয়াশলাই পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে সেখানে কোনো মানুষের দেখা মেলেনি।
এমন অবস্থাতেও সাংবাদিক দলটির সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যদের বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দেখা যায়, এমকি লুটেরাদের কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদও করেননি তারা।
হতে পারে, অস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়ানো এই লোকগুলো কৌতুহলের বশেই সেখানে ঘোরাফেরা করছিল। হতে পারে, চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তারা অস্ত্র বহন করছিল। তবে সেখানে তাদের উপস্থিতির কারণ এবং ঘরবাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর উচিত ছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা। কোনো কিছুতে সন্দেহ হলে পুলিশের উচিত ছিল বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু এসবের কিছুই সেখানে হয়নি।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর এই আচরণ সন্দেহের উদ্রেক ঘটায় যে, দেশটির কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে রাখাইন রাজ্যে এ পরিস্থিতি তৈরি করছে। রাখাইনের এসব ঘটনা নিয়ে সরাসরি প্রচারিত সংবাদ এবং গাওডু জারা গ্রামের বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার ছবি ভাইরাল হওয়ার অনেক পরে মিয়ানমারের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
রাখাইনে পুলিশ চৌকিতে হামলার প্রেক্ষাপটে সেনা অভিযান শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহ পর জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার আরাকানি বৌদ্ধ ও হিন্দুর অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তর ঘটেছে।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে সন্দেহভাজন ৩৭০ জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে। একই সময়ে প্রাণ হারিয়েছে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ১৫ সদস্য। শুক্রবার মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কর্তৃপক্ষ ৫০ জনকে আটক করেছে, যারা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) সদস্য বলে তারা সন্দেহ করছেন। তবে সেনা অভিযান শুরুর পর কতজন বেসামরিক নাগরিক হত্যার শিকার হয়েছে তা এখনও অজানা। সূত্র: দ্য ইরাবতী
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস
http://bn.mtnews24.com/antorjatik/192299/----------
মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ
https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment