‘তুরস্ক রোহিঙ্গাদের জন্য কেন মায়াকান্না করছে তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে’

বি ডি নিউজ  ২৪ হতে সংগ্রহকৃত

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যেন আঞ্চলিক কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন ১৪ দলের নেতারা। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো গোষ্ঠী দক্ষিণ এশিয়া ও আশপাশের দেশগুলোতে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে কি না তা খতিয়ে দেখতেও তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য তুরস্কের সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা গতকাল সকালে ১৪ দলের এক বৈঠকে সরকারের প্রতি এসব পরামর্শ রাখেন। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুতে করণীয় নির্ধারণ ও নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে বৈঠকটি ডাকা হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের করণীয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন ও তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ এবং এ ইস্যুতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা মহলের ভূমিকা বিশ্লেষণ ও নিজেদের মতামত উপস্থাপন করেন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা। তাঁরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশে দাঁড়াতে দলমত-নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপি নেতাদের এই মানবিক ইস্যুটি নিয়ে রাজনীতি না করে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তাঁরা।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। বৈঠকে বক্তব্য দেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ (একাংশ) সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার, ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। ’ তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্কের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে তুরস্ক আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় তাদের পক্ষ নিয়েছিল সেই তুরস্ক এখন রোহিঙ্গাদের জন্য কেন মায়াকান্না করছে তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। ’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ যেন কোনো আঞ্চলিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিষয়টি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তারও প্রশ্ন। কিন্তু এ ইস্যুটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, যা দুঃখজনক। ’
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘তুরস্ক থেকে যে সাহায্য আসছে তা যদি মানবিক কারণে হয় তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু মানবতার নামে তাদের বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ’
চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিচ্ছি সেটা ঠিক আছে। নির্যাতিত সব রোহিঙ্গা জঙ্গি নয় সেটাও ঠিক, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অনেক রোহিঙ্গা জঙ্গির সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ আছে। অনেকে সেখানে প্রশিক্ষণও নিয়েছে। সে জন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সময় থেকে আমাদের এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন সময়ে তাদের উদ্দেশ্য পূরণে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করেছে। ’
ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে কী আছে তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এই অঞ্চলে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এই সমস্যার সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। ’
মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে স্থলমাইন স্থাপন করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে মন্তব্য করে জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করতে পারে। ’
বৈঠকের সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য শিগগিরই ১৪ দলের একটি প্রতিনিধিদল টেকনাফে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফ করেন ১৪ দলের নেতারা। সেখানে মোহাম্মদ নাসিম রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবাইকে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের সব রাজনৈতিক দলকে বলব, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি মানবিক বিষয়। এই মানবিক বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু বানাবেন না বিএনপির বন্ধুরা। ’ তিনি বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘অন্য সময়ে যাই করে থাকুন না কেন এই ইস্যুতে সরকারকে সহায়তা করুন। সমালোচনা করার সময় এখন না, এখন সরকারকে সহায়তা করার সময়। ’
এক প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, ‘সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে আজ জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতনের নিন্দা করেছে। বিএনপির কথার কোনো গুরুত্ব নেই, তারা অর্থহীন সমালোচনা করে। ’
মিয়ানমারের সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন-গণহত্যা চালাচ্ছে তা আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। যেকোনো দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। গণহত্যা করে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় না। এটা মানবতার চরম লঙ্ঘন। আমাদের সরকার সম্পূর্ণ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এটা চলতে পারে না। আমাদের মতো একটা জনবহুল দেশে অন্য একটি দেশের নাগরিকদের আশ্রয় দিতে পারি না। ’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত। বিভিন্ন অস্ত্রধারী গ্রুপ তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যাতে নষ্ট না করতে পারে সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। এ জন্য আমাদের জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট এ নিয়ে একটি পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাচ্ছে যা ঠিক নয়। ’
মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments