সমকাল প্রতিবেদক
গত কয়েক বছরে দেশের ধনী-গরিব বৈষম্য অনেক বেড়েছে। ধনিক শ্রেণির আয় যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাড়েনি গরিবের আয়। দেশের মোট আয়ের ২৮ শতাংশই রয়েছে ৫ শতাংশ ধনাঢ্য পরিবারের হাতে। আর সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ পরিবারের আয় মাত্র দশমিক ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের মোট আয় ১০০ টাকা হলে তার ২৮ টাকা আয় যাচ্ছে ধনাঢ্য ৫ শতাংশ পরিবারে। আর মাত্র ২৩ পয়সা আয় যাচ্ছে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬-এর তথ্য বিশ্নেষণ করে দেশের ধনী-গরিবের আয়ের এ ব্যাপক বৈষম্যের চিত্র পাওয়া গেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক অনুষ্ঠানে এ জরিপ প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন। জরিপে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির তথ্য রয়েছে। এতে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্যের হার কমলেও এখনও দেশের সাতটি জেলার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে পেছনে থাকা ৫ শতাংশ পরিবার দেশের মোট আয়ের দশমিক ৭৮ শতাংশ আয় করত। ২০১৬ সালে তা আরও অনেক কমে দশমিক ২৩ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে ২০১০ সালে সবচেয়ে বেশি আয় করা ৫ শতাংশ পরিবারের কাছে দেশের মোট আয়ের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ ছিল। ২০১৬ সালে যা বেড়ে ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বেশি আয়ের মানুষের আয় আরও বেড়েছে। ২০০৫ সালের জরিপে দেশে যে আয়বৈষম্য ছিল, ২০১০ সালে জরিপে দেখা যায় তা কিছুটা কমেছে। তবে ২০১৬ সালের জরিপে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬-এর তথ্য বিশ্নেষণ করে দেশের ধনী-গরিবের আয়ের এ ব্যাপক বৈষম্যের চিত্র পাওয়া গেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক অনুষ্ঠানে এ জরিপ প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন। জরিপে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির তথ্য রয়েছে। এতে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্যের হার কমলেও এখনও দেশের সাতটি জেলার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে পেছনে থাকা ৫ শতাংশ পরিবার দেশের মোট আয়ের দশমিক ৭৮ শতাংশ আয় করত। ২০১৬ সালে তা আরও অনেক কমে দশমিক ২৩ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে ২০১০ সালে সবচেয়ে বেশি আয় করা ৫ শতাংশ পরিবারের কাছে দেশের মোট আয়ের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ ছিল। ২০১৬ সালে যা বেড়ে ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বেশি আয়ের মানুষের আয় আরও বেড়েছে। ২০০৫ সালের জরিপে দেশে যে আয়বৈষম্য ছিল, ২০১০ সালে জরিপে দেখা যায় তা কিছুটা কমেছে। তবে ২০১৬ সালের জরিপে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
জরিপে আয়ের ভিত্তিতে দেশের পরিবারগুলোকে ১২ ভাগে বিভক্ত করে জাতীয় আয়ে কাদের কত অনুপাত, তা দেখানো হয়েছে। এ ব্যবস্থাকে বলা হয় জাতীয় পর্যায়ে পরিবারভিত্তিক আয় বণ্টন ও জিনি অনুপাত। সর্বনিল্ফম্ন ও সর্বোচ্চ আয় করা পরিবারগুলো ছাড়া আরও ১০টি ভাগের পরিবার রয়েছে। সেখানে যেসব পরিবার কম আয় করে, তাদের আয়ও কমেছে। অপেক্ষাকৃত বেশি আয়ের পরিবারের আয় বেড়েছে।
আয়বৈষম্যের এ তথ্য দেখে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে বলেন, দরিদ্র প্রতিবেশীর দিকে খেয়াল রাখতে হবে ধনীদের। যথাযথভাবে জাকাত দেওয়ার জন্য ধনীদের আহ্বান জানিয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈষম্য কমাতে কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হবে। যারা বেশি আয় করছেন, তাদের কাছ থেকে আরও বেশি কর নেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলী তসলিম আয়বৈষম্যের এ পরিস্থিতিকে দেশের জন্য উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি সমকালকে বলেন, কয়েক বছর ধরে নিল্ফম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের প্রকৃত মজুরি বাড়ছে না। দেশের যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তার সুবিধা সবাই পাচ্ছে না। আবার কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতিও কমে গেছে। ফলে সবার জন্য অর্জনযোগ্য এবং কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। আয় বিভাজনের চিত্র দেখে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল শেষে দেশের প্রতি পরিবারের গড় মাসিক আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। আর মাসিক ব্যয় ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা। গ্রামের মানুষের গড় মাসিক আয়ের চেয়ে গড় মাসিক ব্যয় বেশি। গ্রামীণ এলাকার প্রতি পরিবারের গড় মাসিক আয় ১৩ হাজার ৩৫৩ টাকা। আর মাসিক গড় ব্যয় ১৪ হাজার ১৫৬ টাকা। শহরের খানাপ্রতি গড় আয় ২২ হাজার ৫৬৫ আর ব্যয় ১৯ হাজার ৬৯৭ টাকা।
গ্রামের মানুষের ৫০ দশমিক ৪৯ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্য ও পানীয়র পেছনে। আর সাড়ে ৭ শতাংশ পোশাক ও জুতা, ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ আবাসন ও বাড়িভাড়ায়, জ্বালানিতে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, চিকিৎসায় ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং শিক্ষায় ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ ব্যয় হয়। অন্যদিকে শহরের মানুষের ৪২ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্য ও পানীয়র পেছনে। পোশাক-পরিচ্ছদে ব্যয় ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। আবাসন ও বাড়িভাড়ায় ব্যয় হয় ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, জ্বালানিতে ৫ শতাংশ, চিকিৎসায় ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং শিক্ষায় ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ ব্যয় হয়।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল শেষে দেশের মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ দরিদ্র। এর আগে ২০১০ সালে করা জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। ছয় বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। এবারের জরিপ অনুযায়ী দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১২ দশমিক ৯ শতাংশ অতিদরিদ্র, যা ২০১০ সালে ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
দেশের সাত জেলার দারিদ্র্যের হার ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামে। একসময়ের মঙ্গাকবলিত এ জেলার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ এখনও দরিদ্র। দিনাজপুরে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ, জামালপুরে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ, কিশোরগঞ্জে ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ ও মাগুরায় ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য। আর বান্দরবানের ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ ও খাগড়াছড়ির ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এসব জেলার অতিদারিদ্র্যের হারও জাতীয় অতিদারিদ্র্যের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া আরও ১৯টি জেলা রয়েছে, যেসব জেলার দারিদ্র্যের হার ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। সামগ্রিক দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য উভয় ক্ষেত্রেই রংপুর বিভাগ সবার ওপরে রয়েছে। এর পরেই রয়েছে ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগ।
রাজধানীর পাশের জেলাগুলোতে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম। সবচেয়ে কম দারিদ্র্য নারায়ণগঞ্জে। শিল্পসমৃদ্ধ এ জেলার মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এর পরেই রয়েছে মুন্সীগঞ্জ। এ জেলার দারিদ্র্যের হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ। ৩ দশমিক ৭ শতাংশ দারিদ্র্য নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পদ্মাপাড়ের জেলা মাদারীপুর। আরেক শিল্পসমৃদ্ধ জেলা গাজীপুরে দারিদ্র্যের হার ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ফরিদপুরে দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ফেনীর দারিদ্র্যের হার ৮ দশমিক ১ শতাংশ। রাজধানী জেলা ঢাকার দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিবিএস ভবনে আয়োজিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকর, লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন, বিবিএসের মহাপরিচালক আমির হোসেন ও জরিপ প্রকল্পের পরিচালক দীপঙ্কর রায় বক্তব্য রাখেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের চরম দারিদ্র্যের হার বৈশ্বিক চরম দারিদ্র্যের তুলনায় কম। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর একেবারেই শূন্য হাতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকর বলেন, বাংলাদেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, এ জরিপে ভালো খবর হচ্ছে দারিদ্র্য কমেছে। আর মন্দ খবর হচ্ছে, দারিদ্র্য কমার গতি কমে গেছে। পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হকও ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য নিরসন হবে বলে মন্তব্য করেন। বিবিএস ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে সারাদেশের ৪৬ হাজার ৮০টি পরিবারের আয়-ব্যয়ের ওপর এ জরিপ করেছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১২ হাজার ২৪০টি পরিবারের ওপর জরিপ করা হয়েছিল।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment