“পদত্যাগ করিনি” ডিসেম্বরে অবৈধ হয়ে যাচ্ছে সরকার: সিনহা


গত ১০ নভেম্বর শেখ হাসিনা সরকার সাড়ম্বরে ঘোষণা করে, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে পদত্যাগ করেছেন। পরের দিন বঙ্গভবনের প্রেস সচিবের সূত্রের বরাতে গণমা্ধ্যমে প্রকাশ করে, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহন করেছেন। এরপরে পার হয়ে গেছে তিন সপ্তাহ, কিন্তু প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহনের অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা আসেনি। প্রধান বিচারপতির পদ শূণ্য ঘোষণা করা হয়নি। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কোনো প্রকৃয়া গ্রহন করেননি রাষ্ট্রপতি। মোট কথা, বিষয়টি নিয়ে জনগন অন্ধকারে আছে। অবৈধ ঘোষিত সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করে দেশের মানুষকে ঘোলাপানি খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে সরকারের নিরবতা পরিস্কার জানান দিচ্ছে, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার কথিত পদত্যাগপত্র কার্যকর হয়নি। অর্থাৎ বিচারপতি সিনহা এখনও যথারীতি দেশের প্রধান বিচারপতি পদে বহাল আছেন। তবে সরকার সৃষ্ট জোর জুলুমের পরিস্থিতির কারনে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না বা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
এহেন অবস্থায় কানাডায় কন্যার কাছে অবস্থানরত প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, এবং তাঁর ঘনিষ্ট একটি মাধ্যম থেকে জানা গেছে, সিনহা সাহেব জানিয়েছেন- তিনি পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগ করতে হলে রাষ্ট্রপতির সম্মুখে উপস্থিত হয়ে নিজ হস্তে লিখিত পত্র জমা দিতে হয়, অথবা দেশে এসে বিধিবদ্ধ পদ্ধতিতে পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করলেই তা আইনসিদ্ধ হবে। এছাড়া অন্য কোনো বাঁকা পথে পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো নাটক সৃষ্টি করা হলে, তা অবৈধ ও বাতিলযোগ্য হবে। বিচারপতি সিনহা এখনও দেশে ফিরতে চান, এবং তিনি চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১ আগস্ট আপিল বিভাগের ঘোষিত একটি পূর্নাঙ্গ লিখিত রায়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণার পর থেকে বর্তমান বিনাভোটের সরকার বিচারপতি সিনহার উপরে রুষ্ট হয়ে তাঁকে অপমান অপদস্ত করে, এমনকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে চাপ প্রয়োগ করেন। সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর এক অতিউৎসাহী মেজর জেনারেল আকবর বিচারপতি সিনহার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে এক মাসের ছুটির কাগজে সাক্ষর নেন। এরপরে বিচারপতি সিনহাকে দু’সপ্তাহ কৌশলে গৃহবন্দী রেখে নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে অবশেষে সিনহাকে অষ্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেয় সরকার। যাবার কালে সিনহা সাহেব মিডিয়াকে বলে যান, তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন না, বরং আবার ফিরে আসবেন। এর আগে বিচারপতি সিনহার দুই ঘনিষ্ট স্বজন এবং এক পারিবারিক বন্ধুকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আটক করে তাদেরকে অত্যাচার ও চাপ দিয়ে সিনহার দুর্নীতির প্রমানাদি তৈরী করা হয়। সম্মিলিত চাপ ও চাতুরতার কৌশল প্রয়োগ করে বিচারপতি সিনহাকে দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য করে সরকার। জবরদস্তির ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসকে বাংলাদেশ সরকার থেকে জানানো হয়, সিনহাকে নিয়ে কোনো বিমান বাংলাদেশে নামতে দেয়া হবে না। বাধ্য হয়ে সিনহার দেশে ফেরা আটকে যায়। অন্যদিকে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার লোকের সিনহার ভাই ও তার স্ত্রীর ভাইকে আটকে রেখে তাদেরকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করার চাপ দিয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত গোয়েন্দা সংস্থার সিনিয়র অফিসাররা সিনহার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেয়ার কথা ঘোষণা করে। তবে বিচারপতি সিনহা ভালো করেই জানেন, এভাবে পদত্যাগ করার কোনো সুযোগ নাই। তাছাড়া আপিল বিভাগে ঘোষিত ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পরে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ সংক্রান্ত সাংবিধানিক উপবিধি ৯৬(৪) এখন আর বহাল নাই। ফলে প্রধান বিচারপতির সিনহার পদত্যাগ করার আইনগত সুযোগ আপাতত নাই। এসব কারনে সরকারের কথিত পদত্যাগপত্রের গল্পটি বেকারে পরিণত হয়।
তাছাড়া, সরকার যেভাবে ভেবেছিল সিনহাকে অপসারনের পরে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা যাবে, সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসাবে যিনি আসার কথা আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, তিনি আওয়ামী বান্ধব নন। ফলে বিপদ আরও বাড়বে বই কমবে না। তাই নতু প্রধান বিচাপতি নিয়োগ করতে চান না সরকার। বরং ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কোনোমতে ঠেকা কাজ চালানোর পথে চলছে সরকার ও রাষ্ট্রপতি। ষোড়শ সংশোধনীর রায় খুব দ্রুত রিভিউ করার কথা আগে বলা করা হলেও এখন এটর্নি জেনারেল বলছেন ভিন্ন কথা- নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না করা পর্যন্ত রিভিউ করে লাভ হবে না।
এছাড়াও বিচারপতি সিনহার হাতে রয়েছে বেশ কয়েশ’ মামলার রায় লোর কাজ। সব কিছু মিলিয়ে বিচারপতি সিনহাকে আরও অনেকদিন অ্যাকটিভ দেখা যাবে। আর সে কারনেই সরকার সিনহার ইস্যুকে আপাতত ঢিলেমি দিয়ে সময় পার করার পথে হাটছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সিনহার স্বাভাবিক অবসরের তারিখ। তবে ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রকাশ হওয়ার পরে অবসরের তারিখটি আমৃত্যুও গণনা করা যেতে পারে। এসব কারনে সিনহার ইস্যুটি একটি অসমাপ্ত ছোটগল্পে রূপ নিয়েছে। এর ভবিষ্যত কি হবে, তার জন্য আরও দু’মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে সিনহার ভবিষ্যত নির্ভর করছে খুটির জোর ভারতের উপর। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বাড়িতে গিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার অনিন্দ্র ব্যানার্জী। বিষয়টি অনেকের নজর কেড়েছে।
ইতোমধ্যে দেশবাসী অবহিত আছেন যে, বিচারপতি সিনহা এবং আপীল বিভাগের সকল বিচারপতিদের দেয়া আরেকটি রায়ে (২২ আগস্ট ২০১৭ তারিখের) বর্তমান সংসদের ১৫৪ এমপিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। রায়টি প্রকাশের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (গ্যাগ অর্ডার) দিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি কার্যকর হলে বর্তমান সংসদের সাথে সরকারও অবৈধ হয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতি ঐ রায়টি কার্যকর না করলেও আগামী মাসে (ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে) গ্যাগ অর্ডার আপনা আপনি উঠে যাবে। ফলে সংসদ ও সরকার অবৈধ হয়ে যাবে। নতুন সংকটে পড়বে দেশ।
Source মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments