বহু দিন ধরে সোনার হরিণের পেছনে ছুটছিলেন দরিদ্র্র পরিবারের মনি আক্তার। বহু কাট-খড় পুড়িয়ে অবশেষে মিলে গেল কাঙ্খিত একটি সুযোগ। সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে অফিস সহকারী পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ বাছাই প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় সব ধাপ শেষে মনোনীত হলেন তিনি। মনি আক্তারের আনন্দ বাধ মানে না। সরকারি একটি চাকরি পেয়ে গেছেন! পরিবারের দুঃখ এবার ঘুচবে।
দুঃখ ঘুচানোর আগে আরেকটি ধাপ বাকি ছিল অবশ্য। নিয়োগদাতা ‘কর্তৃপক্ষ’কে দিতে হবে মোটা অংকের ঘুষ। বিকল্প কিছুই নেই এই তরুণীর সামনে। নিশ্চিত হয়ে যাওয়া চাকরিটি হাতছাড়া হয়ে যাবে টাকা দিলে। তাই চড়া সুদে ঋণ নিয়েই দাবি মেটালেন চাকরিদাতাদের। তবেই মিললো নিয়োগপত্র।
এবার আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরিতে যোগ দেবার পালা। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে কথিত অফিসে গিয়ে দেখেন এতদিন ধরে যা যা করে এসেছেন তার সবই ভুয়া! সরকারি অফিসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা, নিয়োগপত্র সবকিছুর আয়োজন করেছে জালিয়াতচক্র। মনি তাদের ফাঁদে পড়েছিলেন।
মনি বললেন, ‘সরকারির চাকরির যে সকল আনুষ্ঠানিকতা থাকে, তার সবই করা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা সব হওয়ার পর অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার দেয়া হয়। তারপর আমার হোম ডিস্ট্রিক্টে গিয়ে সিভিল সার্জনের কাছে থেকে কাজগপত্র এনেছি। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর দেখি এরা আসলে ভুয়া।’
সরকারি চাকরি দেয়ার নামে অভিনব কায়দায় এমন প্রতারণার শিকার শুধু মনি আক্তারই নন। যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই চক্রের প্রতারণার আরও অনেক তথ্য। প্রার্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ তৈরি করেছে চক্রটির। তাদেরকে ব্যবহার করে সরকারি দপ্তরেই পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে! এরপর বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারছে না।
মনি আক্তার ওই চাকরিতে নিয়োগের খোঁজ পান তার প্রতিবেশি ওয়াসিম নামের একজনের মাধ্যমে। ওয়াসিম জানান, তিনি এসব তথ্য জেনেছেন আসলাম নামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার কাছে। আসলামের রুমেই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত আসলামের কার্যালয়ে গেলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।তার দাবি, বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।
বরিশালের অমিতোষ নামে এক চাকরিপ্রার্থী জানান চাকরি দেয়ার নামে তার সাথে প্রতারণার কথা। বাংলাদেশ ব্যংকের ‘এসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার’ পদে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে গিয়ে ঢুকে রীতিমতো মৌখিক পরীক্ষাও দিয়ে আসেন। কিন্তু শেষমেশ বুঝতে পারেন, তিনিও ফাঁদে পা দিয়েছেন।
অমিতোষ বলেন, ‘একদিন আমার ফোনে এসএমএস আসে। সেখানে একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়ে বলা হয় সেটি ভিজিট করতে। আমি সেই ওয়েবে ঢুকে দেখি আমার নামে একটা অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার এসেছে। এরপর নিয়োগপত্রও মিলে যায়।
কিন্তু চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন তিনি। অমিতোষের ভাষায়, ‘এরপর কাজে যোগ দেয়ার জন্য ব্যাংকে যোগাযোগ করলাম। তখন জানতে পারলাম এটা ভুয়া।’
এই ঘটনায় মতিঝিল থানা মামলাও করেন অমিতোষ। তদন্তে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ ব্যংকের এক বড় কর্তা অবসরে যাওয়ার আগে এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য অনেকটা গৎবাঁধা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির মুখপাত্র আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এমন অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে আলোকে ব্যাংক সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরই মধ্যে পুলিশী অভিযানে ধরা পড়ে রেজাউল হক টিটু প্রকৌশলী মাহমুদুল হক মিঠুন, দালাল তোফায়েল সহ একটি চক্র। যারা বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সামরিক বাহিনীসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণা করতো।
Source
মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিক করুণ
https://www.youtube.com/dashboard?o=U
https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment