মারমা দুই বোনকে ধর্ষণ ও নিপীড়ন করেছে কারা?

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ওড়াছড়ি গ্রামে মারমা পরিবারের এক বোনকে ধর্ষণ ও আরেক বোনকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এক আনসার সদস্যকে আটক করে তার ব্যাটালিয়নের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাকে ক্লোজড করে ব্যাটালিয়ন সদরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,  ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ওড়াছড়ি গ্রামে সেনাবাহিনী ও আনসারের সদস্যরা অভিযান চালায়। এসময় এক মারমা পরিবারের বড় বোনকে (১৮) ধর্ষণ এবং ছোট বোনকে (১৩) যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্যাতনের শিকার দুই বোনকে ২৩ জানুয়ারি রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই দুই কিশোরীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়, রানি য়েন য়েন, রাঙামাটির এমপি ঊষাতন তালুকদার ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা।
এরপর চাকমা রাজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “গতকাল (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাঙামাটির সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম ধর্ষণ ও যৌন হামলার শিকার দুই বোনকে দেখতে ও তাদের সঙ্গে কথা বলতে। ঘটনায় আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলাটা সম্ভব হলো ‘নিরাপত্তা’ বাহিনীর বিশেষ পোশাকধারী ও ওয়াকি-টকিওয়ালা এবং ওয়াকি-টকিবিহীন বিশেষ পোশাকবিহীন ব্যক্তিদের বিরোধিতার মুখে। প্রথম বাধা ছিল দর্শনার্থী সংখ্যা নিয়ে। আমার সঙ্গে ছিলেন প্রফেসর বাঞ্চিতা,রানি য়েন য়েন। দ্বিতীয় বাধা ছিল ভাষা। তৃতীয় বাধা ছিল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি আছে কিনা। আমি বললাম, চাকমা সার্কেলের প্রধান হিসেবে অবশ্যই আমার অধিকার আছে আমার সার্কেলের অধিবাসীর খোঁজ-খবর নেওয়ার। আর মানিবাধিকারের বিষয়ে প্রফেসর বাঞ্চিতার রয়েছে দেশের যেকোনও নাগরিকের মানবাধিকার বিষয়ে তদারকি করার। পালটা প্রশ্ন করলাম যে আমাদের দেখা করার ও কথা বলার বিপক্ষে কি কোনও আইন-আদেশ আছে কিনা? উত্তপ্ত ব্যক্তি পরামর্শ দিলেন, এসপি বা ওসি সাহেবের অনুমতি নিতে। আমিও উত্তপ্তভাবে বললাম, তাদের আপত্তি থাকলে যেন তারাই আমাকে কথাটি জানায়।  গরজ তাদের, আমাদের নয়। দুই বোনের মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যে আতঙ্কগ্রস্ত, তা স্পষ্ট। ভাগ্যিস রানি য়েন য়েন মারমা ভাষাভাষী। এতে অন্তত জড়তা পুরোপুরি দূরীভূত না হলেও তারা কিছুটা মাত্রায় হলেও স্বস্তিবোধ করছিলেন।’
ফেসবুকে রাজা দেবাশীষ রায়ের স্ট্যাটাস
বাংলা ট্রিবিউনকে রাজা দেবাশীষ বলেন, ‘যারা জড়িত তারা সেনাবাহিনী, নাকি খাকি পোশাক, তা তো আমরা জানি না। তাদের (নির্যাতনের শিকার দুই মারমা তরুণী) ভাষায় তারা যা বলেছে তা বাংলা করলে মানে সেনা দাঁড়ায় আরকি। সেটা সেনা, না বিজিবি, না পুলিশ, না আনসার, না অন্য কোনও ইউনিফর্ম পরা সেটা তো আমরা বলতে পারবো না। মহিলা যা বলেছেন।’
মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে এখনও কোনও মামলা হয়নি। আমি মানবাধিকার কমিশনের বাঞ্ছিতাকে অনুরোধ করেছিল তারা (এই দুই মারমা তরুণী) যেন এইজন আইনজীবী পায়। মারমা ভাষার এক আইনজীবী সহায়তা করছেন অবশ্য। আমরা সহায়তা দিতে চেষ্টা করবো।’  
চাকমা রানিও প্রায় একই ধরনের কথা লিখেছেন তার স্ট্যাটাসে। তিনি লিখেছেন, ‘ভয় দেখেছেন ভয়? পুলিশ আছে অনেক, সাদা পোশাকেও আরও কত কেউ আছে। তাদের সার্বক্ষণিক পাহারার ভয়? একজন নয় দু’জন নয়। যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে তাদের কাছে পৌঁছাতে হয়েছে সে অনভিপ্রেত নিরাপত্তার ভারে জর্জরিত ভয়ার্ত। রাষ্ট্র ধর্ষণ আর যৌন নিপীড়নের সময় যে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সে নিরাপত্তা এখন তাদের হাসপাতালের ওয়ার্ডে বস্তুত আসামি বানিয়ে রেখেছে। নিরাপত্তার নামে তাদের মুখবন্ধের প্রয়াস, নিরাপত্তার নামে মানবাধিকার কর্মীদের সত্য সন্ধানকে বাধা প্রদান করে, নিরাপত্তা নামে প্রহসন।’ 
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, 'আমিও মেয়েদের দেখে এসেছি। ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। দুই বোনের মধ্যে বড় বোন মারমা ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে পারে না। ছোট বোনটা কিছুটা বাংলা বলতে পারে। তার কথায় যেটুকু বোঝা গেছে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত লোক দেখেছে সে। ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যদি আইনের আওতায় আনা না হয় তাহলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।’
এ বিষয়ে রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ডা. হেনু বড়ুয়াকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের শারীরিক পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা ঠিক হবে না। রিপোর্ট হাতে আসলে তখন বলা যাবে।’
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে দুই কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে ২৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন রাশেল মারমা নামের একজন। তার দাবি, কোনও প্রকার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তবে এই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে এবং রাশেল মারমার দাবি বিষয়ে দুই কিশোরী কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।
এ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিলাইছড়ির ওড়াছড়ি গ্রামের একটি বাড়িতে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল তল্লাশি চালাচ্ছিল। এ সময় পাশের আরেকটি বাড়ি থেকে একটি চিৎকারের শব্দ শুনে সেনা সদস্যরা সেখানে যান এবং একজন আনসার সদস্যকে দেখতে পান। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই আনসার সদস্যকে স্থানীয় আনসার কমান্ডারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।’
বিলাইছড়ির ১০ আনসার ব্যাটালিয়নের জোন কমান্ডার আফজল হোসেন বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে ২০ জনের একটি টহল দল সন্দেহজনক বাড়িগুলোয় অভিযান চালাচ্ছিল। টহল দলে ছিলেন সেনাবাহিনীর ১৪ জন ও আনসারের ৬ জন সদস্য। অভিযানের অংশ হিসেবে সেদিন একটি বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছিল। একজন আনসার সদস্য বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লে পোশাক পরা দেখে একটি মেয়ে চিৎকার করে ওঠে। সেখানে আর কিছুই হয়নি, হওয়ার সুযোগও ছিল না। আমরা পাহাড়ের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত। কিছু লোক আছে যারা পাহাড়কে অশান্ত করতে এসব বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’



এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলার আনসার কমান্ডার আব্দুল আউয়াল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তল্লাশি অভিযানের সময় একটি মেয়ের চিৎকারে শুনে সবাই সেখানে যায়। কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই পায়নি। এরপরও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেই আনসার সদস্য গিয়াস উদ্দিনকে ব্যাটালিয়ন সদরে ক্লোজড করা হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে সেখানে আদৌও কিছু ঘটেছিল কিনা।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২২ জানুয়ারি রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে বিলাইছড়ির ফারুয়া ইনউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ওড়াছড়ি গ্রামে এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ ও তার ছোট বোনকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।
Source মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিক করুণ https://www.youtube.com/dashboard?o=U https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments