‘প্লে-স্টেশনের’ মেসি, দুর্দান্ত বার্সা

সুয়ারেজ করেছেন জোড়া গোল, মেসি করেছেন মুগ্ধ। এস্পানিওলের বিপক্ষে পরশু বার্সেলোনা জিতল এই দুইয়ের দাপটে l রয়টার্সসুয়ারেজ করেছেন জোড়া গোল, মেসি করেছেন মুগ্ধ। এস্পানিওলের বিপক্ষে পরশু বার্সেলোনা জিতল এই দুইয়ের দাপটে l রয়টার্স
গোল করেছেন ম্যাচের ৯০তম মিনিটে। বার্সেলোনা তার আগেই ৩-১ গোলে এগিয়ে। এস্পানিওলের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ে তাহলে লিওনেল মেসির অবদান কতটা?

শুধু স্কোরকার্ডই এমন প্রশ্ন তুলবে। যাঁরা খেলা দেখেছেন, কিংবা পরে অন্তত ‘হাইলাইটস’ দেখে নিয়েছেন, তাঁদের কাছে পরশু রাতের বার্সেলোনা ডার্বিটা তো ছিল মেসি-ম্যাজিকের! যে রাতে মেসি, আরও শতবারের মতো, পুরো বিশ্বকে বিমুগ্ধ করেছেন। গোল দিয়ে এর বিচার হয় না।
ম্যাচ শেষ হতেই অ্যান্ডি কোল টুইট করলেন, হাত দিয়ে চোখ ঢেকে রাখার ইমোটিকন দিয়ে লিখলেন, ‘মেসি! প্লিজ!’ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক স্ট্রাইকারের কাছেই মেসির ড্রিবলিং মনে হয়েছে অসহ্য সুন্দর! সত্যি বলতে, বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড একেবারে নতুন কিছু করেননি। আগেও বহুবার এমন খেলেছেন। তবু এই ম্যাচটিতে যা করেছেন, বারবার দেখলেও তাতে অরুচি হয় না।
মেসি-মুহূর্তের কথা বললে এই ম্যাচে শুধু নির্দিষ্ট দুটি মিনিটের হাইলাইটস দেখলেই চলবে। প্রথমটি ৬৭ মিনিটে। প্রথমার্ধে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার লম্বা পাস ধরে লুইস সুয়ারেজের দেওয়া গোলে বার্সা তখন ১-০ গোলে এগিয়ে। ম্যাচজুড়ে মাঝমাঠে সৃষ্টিশীলতার ফুল ফুটিয়ে যাওয়া ইনিয়েস্তাই পাস দেন মেসিকে। কিন্তু তখন কে জানত, মেসি আরও দুর্দান্ত কিছু জমিয়ে রেখেছেন!
পায়ের নাচনে, সাপের মতো শরীরের মোচড়ে একে একে চার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ঢুকে গেলেন বক্সে। শটও নিয়েছিলেন, কিন্তু এস্পানিওলের বদলি গোলকিপার রবার্তো সেটি ঠেকিয়ে দেন। তবে গোল বাঁচাতে পারেননি, সামনেই দাঁড়ানো সুয়ারেজ বল ঠেলে দেন জালে। গোলটা করে সুয়ারেজ অবশ্য তৃপ্ত নন, ‘আমি নিজে দ্বিতীয় গোলটা করার চেয়েও বেশি ভালো লাগত, যদি এত দুর্দান্ত দৌড়ের পর মেসি গোলটি করে আসত।’
মেসি-প্রশংসা অবশ্য এখানেই থামেনি সুয়ারেজের। থামতে দেয়নি পরের মিনিটেই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের আরেকটি জাদুকরি মুহূর্ত। আবারও বক্সের সামনে চারজন এস্পানিওল ডিফেন্ডারের দেয়াল ভেদ করে ‘অদৃশ্য মানবে’র মতো চলে আসেন মেসি। এবারও গোল দিতে পারেননি বার্সা নাম্বার টেন, তাঁর গড়ে দেওয়া আক্রমণকে পূর্ণতা দেন জর্ডি আলবা। কিন্তু সুয়ারেজের চোখে লেগে ছিল মেসির ড্রিবলিংটাই, ‘মুভটা অনেকটা প্লে-স্টেশনের মতো। ওর মতো করে এমনটা আর কেউ করতে পারে না।’
প্রাপ্য গোলটা মেসি পান ম্যাচের শেষ মিনিটে, সুয়ারেজের সঙ্গে দেওয়া-নেওয়ার পর বল ঠেলে দেন এস্পানিওল গোলকিপারের দুই পায়ের ফাঁক গলে। এর আগে অবশ্য ৭৯ মিনিটে দুর্দান্ত আক্রমণের পর এস্পানিওলের হয়ে ব্যবধান কমিয়ে এনেছিলেন লোপেজ সিলভা।
কিন্তু তার হিসাব কে রাখে! এই ম্যাচ তো মেসির। এস্পানিওল কোচ কিকে সানচেস ফ্লোরেসও ম্যাচের পর মেতেছিলেন প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডের প্রশংসায়, ‘মেসি আমাদের রক্ষণ ছিন্নভিন্ন করার আগ পর্যন্ত ম্যাচটা স্বাভাবিকই ছিল। ও-ই একমাত্র খেলোয়াড়, যে চাইলে প্রতি ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করতে পারে।’ বার্সা কোচ লুইস এনরিকের প্রশংসা পেয়েছে পুরো দলই, ‘নিজের জায়গায় স্বচ্ছন্দ কিছু খেলোয়াড়কে অবিশ্বাস্য, অভাবিত কিছু করতে দেখলাম আজ, যা এই দুর্দান্ত খেলাটিকে আমাদের কাছে আরও উপভোগ্য করে তুলছে।’ এএফপি, ইএসপিএন।

Comments