- Get link
- X
- Other Apps
2016-12-23 14:10:38.0 BdST
টানা ২৫ দিন! বিশ্রামের জন্য প্রতিদিন দুই ঘণ্টার ছুটি বাদ দিয়ে ৫৫৮ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট তবলা বাজিয়ে গিনেজ বুকে স্থান পাওয়ার আশা করছেন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার ছেলে পণ্ডিত সুদর্শন দাশ।
পূর্ব লন্ডনের মেনর পার্ক এলাকার শিভা মুনেতা সঙ্গম হলে ২৭ নভেম্বর বিকাল ৪টা থেকে তবলা বাজানো শুরু করেন সুদর্শন। শেষ করেন বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায়; সমাপনী অনুষ্ঠানে কমিউনিটি নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
সুদর্শন বলেন, বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের জন্য ‘আরেকটি বিজয়’ এনে দিতেই তার এ চেষ্টা।
“কোনো আর্থিক লাভের জন্য আমি তবলা বাজানোর রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নিইনি, করেছি দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য।”
এর আগে দীর্ঘক্ষণ তবলা বাজানোর রেকর্ড ছিল ভারতের কুজালমান্নাম রামাকৃষ্ণানের। কেরালায় ২০০৯ সালের ৫ জুলাই থেকে টানা ২১ দিন ৫০১ ঘণ্টা বাজিয়ে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান তিনি।
“রামাকৃষ্ণান আমার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন,” বলেন সুদর্শন।
তিনি বলেন, “তার বাজানোসহ অনুমোদিত বিরতির সময়টুকুও ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। এখন সব কাগজপত্র ও রেকর্ড গিনেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”
তিন সপ্তাহের মধ্যে ফল জানাবে গিনেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে সুদর্শনের বিশ্ব রেকর্ডের স্বীকৃতি মিলবে বলে প্রত্যাশা হান্নানের।
গিনেজের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ চাইলে তাৎক্ষণিকভাবেও তার রেকর্ড স্বীকৃতির জন্য পরীক্ষা করাতে পারে। এজন্য গুণতে হয় ৮ হাজার পাউন্ড।
টাকার অভাবে স্বীকৃতির জন্য তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে সুদর্শনকে। রেকর্ড ভাঙ্গতে এমনিতেও প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড খরচ হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
টানা ২৫ দিন মেনর পার্কের কমিউনিটি হলের একটি কক্ষে বিছানার উপর বসে বাজিয়েছেন সুদর্শন। সামনে ছিল এক ডজন তবলা, হারমোনিয়াম ও একটি ল্যাপটপ।
সুদর্শনের বাজনা রেকর্ড করার জন্য ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা; যার মাধ্যমে তার বিশ্রামের সময় ও ডাক্তারি পরীক্ষার সবকিছু রেকর্ড করা হয়েছে।
দুই চিত্রগ্রাহকের একজন একলাসুর রহমান পাক্কু বলেন, “তবলা বাজানো দেখতে, শুনতে ও উৎসাহ দিতে প্রতিদিনই কয়েকজন করে এসেছেন; তাদের মধ্যে ছদ্মবেশে গিনেজ কর্তৃপক্ষের লোকও থাকতে পারে।”
কোনো কোনো দিন টানা ১২ ঘণ্টা সুদর্শনের তবলা বাজানোর ভিডিও নিতে গিয়ে নিজেও তবলার ‘নেশায় পড়ে’ গেছেন বলে জানান পাক্কু।
ল্যাপটপে বাজানো জনপ্রিয় ২৪টি গানের সঙ্গে কখনো ধীরে, কখনো দ্রুতলয়ে তবলা বাজিয়েছেন সুদর্শন।
তিনি জানান, তবলার ছয়টি ঘরানায় বাজাতে পারেন তিনি। ১০ হাজার বিটের কম্পোজিশন নিয়ে নিজেও বানিয়েছেন ‘টেমস’ নামে নতুন একটি ঘরানা, যা তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।
চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমিতে সুদর্শনের তবলায় হাতেখড়ি হয় চার বছর বয়সে। ১৯৯০ সালে ফুলকুঁড়ি আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পাওয়ার দুই বছরের মাথায় শান্তিনিকতনে যান পণ্ডিত বিজন বিহারি চ্যাটার্জির কাছে প্রশিক্ষণ নিতে। সেখানেই ১৯৯৮ সালে মেলে ‘তবলা বিশারদ’ উপাধি।
২০১১ সালে তার ‘লার্ন টু প্লে তবলা’ ডিভিডি আকারে প্রকাশিত হয়। দুই বছর পর বাজারে আসে ‘লার্ন টু প্লে তবলা উইথ মিউজিক’।
চ্যানেল ফোর, বিবিসি টেলিভিশন, স্কাই টিভি ও ব্রাজিলের ফিনিক্স টেলিভিশনে তবলা বাজানো সুদর্শনের রয়েছে ১০০টির বেশি কনসার্ট ও পুরস্কার বিতরণীতে বাজানোর অভিজ্ঞতা।
লন্ডন বারা অব নিউহ্যামের শিক্ষক সুদর্শন এর আগে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে মিউজিক ইন্সপেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন। বাজিয়েছেন রয়েল অ্যালবার্ট ও বারবিকান হলে; ঝুলিতে আছে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ওটু’র সঙ্গে তবলায় বোল তোলার স্মৃতি।
বিশ্বরেকর্ড গড়ার অনুষ্ঠানের আগে ১৫ দিন ‘প্র্যাকটিস’ করেছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত টানা ২৫ দিন বাজাতে পেরে দারুণ আনন্দিত তিনি।
সুদর্শনের ভাষায়, তবলা তার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment