দেশেই স্মার্ট বাড়ির প্রযুক্তি

প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়ির নিয়ন্ত্রণ। স্মার্ট হোমের ধারণা তো এমনই। এতে মানুষের কসরত যেমন কমে, জীবনযাত্রাও সহজ হয়। স্মার্ট বাড়ির জন্য বেশ কয়েকটি পণ্য তৈরি করেছে দেশি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলম্বটেক বিডি। আর তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাঁদেরই ‘স্মার্ট হোম সাইনপালস’ মোবাইল অ্যাপ দিয়ে। গতকাল রোববার ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে কথা হয় অ্যাপলম্বটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সাইফুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু দেশের মধ্যে নয়, বহির্বিশ্বেও নিজেদের প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে চাই। দেশীয় ব্র্যান্ডকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে চাই।’


অ্যাপই বৈদ্যুতিক বোর্ডের নিয়ন্ত্রক
ধরুন, মাঝরাতে আপনার ঘুম ভেঙে গেল। বাতি জ্বালাতে হবে? অ্যাপের মাধ্যমেই তা পারবেন। একইভাবে বন্ধও করতে পারবেন। এর জন্য অ্যাপের এনাবল ও ডিজাবল বাটনে চাপ দিলেই হবে। একইভাবে ফ্যানও বন্ধ বা চালু করা যাবে। এর জন্য দরকার পড়বে প্রতিষ্ঠানটির তৈরি বিশেষ এক বৈদ্যুতিক বোর্ডের। এসব বোর্ডে টাচ প্রযুক্তি সংযুক্ত আছে। বোর্ডে থাকা সুইচ স্পর্শ করলেই বন্ধ বা চালু করা যাবে। সাইফুল্লাহ জানালেন, তাঁদের বোর্ডে রয়েছে ব্লুটুথ প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত হয় বোর্ড।

.গতি ও আলো কমানো-বাড়ানোফ্যান না হয় অ্যাপের মাধ্যমে চালু করলেন। কিন্তু এর গতি বাড়ানো বা কমাতে কি রেগুলারেটরের প্রয়োজন পড়বে? সাইফুল্লাহ বললেন, ‘অ্যাপেই পারা যাবে গতি বাড়ানো বা কমানো। আর আমাদের বোর্ডের সুইচে সময় নিয়ে টাচ করলে কমানো-বাড়ানো যাবে।’
আর আলো কমানো-বাড়ানোর জন্য তাঁরা বিশেষ এক এলইডি বাতি তৈরি করেছেন। শুধু কমানো-বাড়ানো নয়, চাইলে ঠিক করে দেওয়া যাবে কত ওয়াটে জ্বলবে বাতি। তাও করতে হবে অ্যাপে। তাঁদের বাতি ছাড়া সাধারণ বাতিতে এ সুবিধা পাওয়া যাবে না।

নির্দিষ্ট মানুষ ছাড়া দরজা খুলবে নাআপনার বাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কোন রুম কে খুলতে পারবে, তা-ও আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন। এ জন্য প্রয়োজন পড়বে অ্যাপলম্বটেকের স্মার্ট ক্যামেরার। এতে নির্দিষ্ট মানুষের ছবি যোগ করে দিতে হবে। এর বাইরে কেউ খোলার চেষ্টা করলে সংকেতের মাধ্যমে তা জানিয়ে দিবে অ্যাপটি। কেউ এলেও তা জানা যাবে।

গ্রাহক ঠিক করবেন বিদ্যুৎ খরচএপলম্বটেক স্মার্ট এনার্জি মিটার নামের একটি মিটার উদ্ভাবন করেছে, যা বাড়ির প্রতিটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এই মিটার ব্যবহার করলে গ্রাহক অ্যাপের মাধ্যমে তাঁর মাসিক বিল নিজে থেকেই ঠিক করে নিতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ইতিমধ্যে এ মিটার ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে।

বাতি জ্বলবে মানুষের উপস্থিতিতে
প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি বাতি তৈরি করেছে, যেটি মানুষের উপস্থিতিতে জ্বলে উঠবে। সুইচ অন রাখলেই হবে। তার মানে এই নয় যে দিনের আলোতে জ্বলবে। সাইফুল্লাহ বলেন, এতে এমন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে দিনের আলোতে জ্বলবে না। অন্যদিকে রাতের বেলা মানুষের উপস্থিতিতে জ্বলে উঠবে। এ জন্য ১০ মিটারের মধ্যে থাকতে হবে।

বাইরে থেকেও বাড়ির নিয়ন্ত্রণ
ধরুন, আপনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। আর ঘরে প্রবেশের আগেই বাতি বা শীতাতপযন্ত্র চালু করতে চান। সেটি অ্যাপের মাধ্যমে পারবেন। এ জন্য তাঁদের উদ্ভাবিত স্মার্ট রাউটার ব্যবহার করতে হবে। অ্যাপের মাধ্যমে ঘরের বৈদ্যুতিক যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতেই মূলত রাউটারকে সংযুক্ত করা। এপলম্বটেকের সিইও বলেন, ম্যানুয়ালিও তা ঠিক করে দেওয়া যাবে। ঘরের একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে পৌঁছালে তা চালু হয়ে যাবে। আর তা জিপিআরএসের মাধ্যমে শনাক্ত হবে।

তানিয়া রহমান ও মো. সাইফুল্লাহ l প্রথম আলোপ্রবাসী দম্পতির উদ্ভাবন স্মার্ট বাড়ির প্রযুক্তি
২০০৯ সালের ঘটনা। ডি-র‍্যাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিমন্ডা লোকসানে পড়ে। কর্মী ছাঁটাই করলে চাকরি হারান জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশি মো. সাইফুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া রহমান। এর আগে দুজনে চাকরি করতেন বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিনির্মাতা ইনফিনিওন, সিমেন্স, ইন্টেলে। এবার চাকরি খোঁজা নয় বরং নিজেদেরই কিছু করার উদ্যোগ জন্ম দেয়। ‘তখন আমরা চিন্তা করলাম দুজনে মিলে কিছু করার। দেশে ফিরে কিছু করতে চাইলাম।’ বললেন সাইফুল্লাহ। সে সময় এক বন্ধু সাইফুল্লাহকে বলেন, দেশে গিয়ে সরাসরি কিছু করা কঠিন। এখানে (জার্মানি) কিছু তৈরি করে তবে দেশে যান। ‘এরপর ২০০৯ সালেই আমরা প্রতিষ্ঠা করলাম সাইনপালস।’
শুরু হলো সাইনপালসের গবেষণা। প্রথমেই তৈরি করা হলো বাংলাদেশের জন্য ‘ভেহিকল নেভিগেশন সিস্টেম’। আর তা থেকে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপলম্বটেক বিডি। আর সাধারণ মানুষ ব্যবহার করবে এমন পণ্য হিসেবে স্মার্ট বাড়ির প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মনোযোগ দেন তাঁরা।

Comments