- Get link
- X
- Other Apps
দিনে প্রায়ই সূর্যের দেখা মিলত না। থাকত কনকনে ঠান্ডা। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। বিপর্যস্ত জনজীবন। কিন্তু কোথায় সেই শীত? কথায় আছে, মাঘের শীতে বাঘ পালায়। কিন্তু মাঘ মাস শেষ হতে চলল। এখন গ্রাম থেকে শহর—সব মানুষের একটাই চিন্তা, শীত কেন নেই? রাজধানীবাসীর কাছে এই প্রশ্ন আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অবশ্য এই প্রশ্ন কেবল সাধারণ মানুষের মনে তা নয়, প্রশ্ন রয়েছে আবহাওয়াবিদদের মনেও। উত্তরও খুঁজছেন তাঁরা।
কয়েকজন আবহাওয়াবিদ প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। কিন্তু এবার হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ই শীতের তীব্রতা না থাকার অন্যতম কারণ। তা ছাড়া আরেকটি কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি। গত বছরের চেয়ে এ বছর তাপমাত্রা বেশি ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবার দেশে শীতের তীব্রতা কমে গেছে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে শিল্পায়ন বেড়ে গেছে। এসব কারণে আবহাওয়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে।’
শীত কম থাকায় শীতকালীন সবজি চাষেও বিরূপ পড়েছে। মুন্সিগঞ্জের আলু চাষিরা বলছেন, ‘এ বছর শীত নেই। শীত না পড়লে মহাবিপদ। পোকার আক্রমণ বেড়ে যাবে।’ শীত নিয়ে কেবল মুন্সিগঞ্জের চাষিরা নন, যশোরের কৃষকেরাও চিন্তিত। রাজধানীর বাসিন্দাদের মনেও একই প্রশ্ন—কী হলো এবার? কবে শীত আসবে? অনেকে লেপ-তোশক নামাননি। দেশজুড়ে শীত নিয়ে চলছে ঠাট্টা-তামাশা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেকজন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছরে শীতের ব্যাপ্তিকাল ছিল অনেক কম। আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, গত বছর (২০১৬) জানুয়ারি মাসে তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় দেশজুড়ে। ৫-৬ জানুয়ারি, ১০-১৬ জানুয়ারি এবং ২৩-৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ২০১৫ সালেও তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়। এর ব্যাপ্তিকাল ছিল ৬-১৪ জানুয়ারি, ১৮-২৩ জানুয়ারি এবং ২৫-২৭ জানুয়ারি। আর চলতি বছর তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় ৭-৯ জানুয়ারি।
আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। ভারত উপমহাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। গত বছর ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে দশমিক .৯১ ভাগ তাপমাত্রা বেশি ছিল; যা ছিল গত শতকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ভারতের মতো আমাদের দেশেও গত বছর স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি ছিল।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন, ২০১৫ সাল ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। ২০১৬ সাল ২০১৫ সালের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে উষ্ণতম বছর হয়েছে। আমরা হিসেব করে দেখেছি, যে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে, আমাদের দেশে গত বছর দশমিত ৯২ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি ছিল। অর্থাৎ ভারত ও বাংলাদেশের তাপমাত্রা কাছাকাছি। ভারত উপমহাদেশে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় ১৩ বছরেই তাপমাত্রা ছিল রেকর্ড পরিমাণ। ২০১৫ সালে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে তাপমাত্রা বেশি ছিল।
দেশে শীতকালে সূর্য থাকে দক্ষিণ গোলার্ধে। ২২ ডিসেম্বর হচ্ছে সবচেয়ে ছোট দিন। এই সময় সূর্য সব সময় দূরে থাকে। এ কারণে ডিসেম্বরে তাপমাত্রা কম থাকে। ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য আস্তে আস্তে উত্তর গোলার্ধের দিকে যেতে থাকে। ফেব্রুয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মার্চে গিয়ে অনেক বেড়ে যায়।
বজলুর রশিদ বললেন, ‘আমরা বলে থাকি জেট উইন। ইউরোপে সূর্য অনেক দূরে থাকে। রাতের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। এ সময় একধরনের বাতাস আসে, ওই বাতাস কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই চ্যানেল দিয়ে শীতের ঠান্ডা হাওয়া উত্তরাঞ্চল চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, রংপুর হয়ে ধীরে ধীরে দেশজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে।
আগামী বছর শীতের তীব্রতা কেমন থাকবে—এমন প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই জানিয়ে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আগামী বছর শীতের আবহাওয়া এমন না–ও থাকতে পারে। পড়তে পারে তীব্র শীত।
mongsai79@gmail.com
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment