ভারতের রাজস্থানের সজাত শহরের রামচন্দ্র (২৬) গুগলে চাকরি করেন। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। আর তাঁর বাবা তেজারাম সংখলা (৫০) এখনো প্রতিদিন বস্তা টানেন। দিন শেষে ৪০০ রুপি আয় করেন!
তবে রামচন্দ্র তাঁর বাবা ও মাকে ভুলে যাননি। নিজে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন। বাবা তেজারাম ঋণ করেছেন। গুগলে চাকরি হওয়ার পর সেই ঋণ শোধ করেছেন রাম, এলাকায় বাড়ি করেছেন। বাবা তেজারামকে বলেছেন বিশ্রাম নিতে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাস ভুলতে পারছেন না তেজারাম। সকাল হলেই চলে যান মেহেদি পাতার বস্তা তুলতে। ট্রাকে মেহেদি পাতার বস্তা তুলে দেন। অর্থ উপার্জনের জন্য নয় আনন্দের জন্য কাজটা করেন তিনি।
রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে ২৬২ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে সজাত শহর। আর এ শহরেরই বাবা ও ছেলের কাহিনী নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য হিন্দুস্তান টাইমস।
২০১৩ সালে গুগলে চাকরি পান রামচন্দ্র। চলতি বছর এপ্রিলে সিয়াটল চলে যান তিনি। এরপর বাবাকে বিশ্রাম নেওয়ার কথাই বলছেন রাম। কিন্তু তেজারাম জানান, কাজ না করে তিনি থাকতে পারবেন না।
রামচন্দ্র বলেন, ‘আমি বাবাকে বলেছি কাজ না করতে। কিন্তু তিনি শোনেন না।’
সজাতে সরকারি একটি হিন্দি মাধ্যম স্কুলে পড়েন রামচন্দ্র। ২০০৯ সালে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি রোরকেতে ভর্তি হন। স্থানীয় এক আদালতের কর্মকর্তার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে রামচন্দ্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পরে সেমিস্টার ফি দিয়েছেন ওই শহরেরই অন্য এক বাসিন্দা।
রামচন্দ্র বলেন, শহরের লোকজন আমাকে কিছু কাপড় ও একটি স্যুটকেস কিনে দেন। পরে সবাই চাঁদা তুলে ৩০ হাজার রুপি দিয়ে আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দেন। দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই আমি শিক্ষাঋণ পেয়ে যাই। যা দিয়ে আমার বাকি পড়াশোনাটা চলে যায়।
পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে স্কলারশিপ থেকে আসা টাকা থেকে জমাতেও শুরু করেন রামচন্দ্র। সেই জমানো অর্থ দিয়ে ৭০ হাজার রুপি দিয়ে মা ও বাবাকে একটা রান্নাঘর করে দেন তিনি।
গুগলে চাকরি পাওয়ার পর বাবা তেজারামের সব ঋণ শোধ করেন রামচন্দ্র। তাঁর বাবা ঋণ করেন সাড়ে তিন লাখ রুপি এবং শিক্ষা ঋণ ছিল পাঁচ লাখ রুপি। সব অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছেন রামচন্দ্র। বাবা ও মায়ের জন্য একটা বাড়ি করে দিয়েছেন রাম। আর কিনেছেন দেড় একরের একটি কৃষি জমিও। মা রামি দেবী ওই জমি দেখাশোনা করেন।
রামের মা মারি দেবী ছেলের বেশ প্রশংসা করলেন। তিনি বলেন, ‘ও ছোটবেলা থেকেই বেশ ভালো ছাত্র ছিল। আমরা জানতাম ও আমাদের দিন বদলে দেবে।’
রামচন্দ্র জানালেন, তিনি যখন ঋণ পরিশোধ করতে যান, তখন অনেকেই এ টাকা নিতে চায়নি। তাঁরা পরামর্শ দেন, অন্য কোনো ভালো শিক্ষার্থীকে এভাবেই সাহায্য করতে।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment