চাকরি না পাওয়া সেই যুবকই এখন বিশ্বের অন্যতম ধনী



Image may contain: 1 personলাতিন আমেরিকার জাদুবাস্তবতার মহান ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কার নিতে গিয়ে সুইডিশ একাডেমিতে যে নোবেল ভাষণ দেন তাতে গোটা লাতিন আমেরিকার দু:খ, দুর্দশা এবং হতাশার চিত্র ফুটে উঠে।
কিন্তু তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন তার গুরু মার্কিন ঔপন্যাসিক উইলিয়াম ফকনারের কথা দিয়ে। ফখনারের কথার সুরে মার্কেজ বলেন, আমি মানুষের পরাজয়ে বিশ্বাস করি না। মানুষ এমন প্রাণী তার আসলে কোন পরাজয় হয় না।
আমরা আজ এমন এক পরাজয় স্বীকার না করা মানুষের গল্পই বলতে চায়। পথ চলতে গেলে বাধা আসেই। কিন্তু কিছু মানুষ সেই বাধাকেও তুচ্ছ জ্ঞান করে সামনে এগিয়ে যায় দৃঢ়তার সঙ্গে।
যে লোক সামান্য একটি কেএফসির বিক্রয়কর্মীর চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও বাতিল হয়ে যান, পুলিশের চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়ালে বের করে দেওয়া হয় বা একবার নয়, দশ দশবার হার্ভার্ডে আবেদন করেও যিনি বাতিল হয়ে যান সেই জ্যাক মা বর্তমান পৃথিবীকে এখন স্বপ্ন দেখান। জ্যাক মা ঘুরে দাঁড়ানো ফিনিক্স পাখির পৌরাণিক কাহিনীকেও হার মানিয়েছেন।
চীনা নাগরিক জ্যাক মা তাতে দমে যাননি, হেরে গিয়ে হারিয়ে যাননি। পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তত হয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ই-কর্মাস জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান আলীবাবা। তিনি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী ব্যক্তি। তার বর্তমান মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার! চিন্তা করা যায়, যে লোক মাত্র কেএফসি’র বিক্রকর্মী হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও বাতিল হয়ে যান তিনি বর্তমান বিশ্বকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।
জ্যাক মা’র বাদ পড়ার গল্পটিও মজার। চীনের বাজারে কেএফসি প্রথমবারের মত আসলে সেখানে কিছু বিক্রয়কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়। মোট ২৪ জন চাকিরর জন্য ভাইভা দিলে ২৩ জনের চাকরি হয়। বাদ পড়েন শুধু মাত্র জ্যাক মা।
চীনা পুলিশ বাহিনীতে লোক নেওয়ার সময় তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জ্যাক মার শারীরিক হালকা-পাতলা এবং বেটে গড়নের জন্য সেই লাইন থেকে বের করে দেন। সেখান থেকেও ব্যর্থ হয়ে খালি হাতে ফিরতে হয় তাকে। তার পরেও তিনি থেমে থাকেননি। তিনি যেন বাঙালী দার্শনিক স্বামী বিবেকানন্দ-এর সেই বিখ্যাত কথা আত্মস্ত করেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নাও, জিতলে তুমি বাকিদের নেতৃত্ব দিবে আর পরাজিত হলে বাকিদের পথ দেখাবে।’
জ্যাক মা তার সংগ্রামী জীবনের সমস্ত অসুর বধ করেই বাকি বিশ্বের ই-কর্মাস ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যে লোক মাত্র কয়টা টাকার জন্য একটা বিক্রয়কর্মীর চাকরি জুটাতে পারেননি সেই তিনিই ২০১৬ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন।
মাত্র গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বব্যাপী অনলাইনে অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান মানিগ্রাম কিনে নিয়েছে জ্যাক মা’র প্রতিষ্ঠান আলীবাবা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে কিনতে আলীবাবাকে খরচ করতে হয়েছে ৮শ’ ৮০ মিলিয়ন ডলার! আলীবাবা মানিগ্রামকে কিনে নেওয়ার সংবাদের পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে।
এই গল্পটা তাদের জন্য যারা মনে করেন, আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। বিশ্বাস করুন আপনি পারবেন। কারণ বিশ্বাস হারানোটাও একটা পাপ।
mongsai79@gmail.com

Comments