১৫ টাকার ভাড়া এখন ৬০০ টাকা!

পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে ব্যস্ততা নেই বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে। ছবিটি আজ বুধবার দুপুরে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে যানবাহন-সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এ সুযোগে রিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ইচ্ছামতো আদায় করা হচ্ছে। ঢাকার পাশাপাশি একই চিত্র বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর:
বরিশাল: পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে আজ বুধবার সকাল থেকে বরিশালে নতুন করে শুরু হয়েছে ট্রাক ধর্মঘট। বাস ও ট্রাকশ্রমিকেরা মিলে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় মাহেন্দ্রসহ অন্য যানবাহনও চলছে সীমিত আকারে। আর এতে দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ যাত্রীদের।
পরিবহন ধর্মঘটের সুযোগে মাহেন্দ্র ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে ৩ থেকে ১০ গুণ বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন বরিশাল বিমানবন্দরের অফিস সহকারী নাসরিন সুলতানা। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে রহমতপুরে তিনি ১৫ টাকা ভাড়ায় যাতায়াত করেন। আজ সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ভাড়া চাইছে ৬০০ টাকা। অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে।
মো. তাইজুল ইসলাম নামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাস চলাচল বন্ধ থাকলে যাত্রীদের বিকল্প বাহনে যাওয়ার জন্য পথে যাতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয় এ জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। তাঁরা অভ্যন্তরীণ সড়কপথে মাহেন্দ্রসহ অন্যান্য ছোট যান ছেড়ে দিচ্ছেন যাত্রীদের সুবিধার্থে। যাতে কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটে, এ জন্য বাড়তি পুলিশের ব্যবস্থা রয়েছে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায়।
চট্টগ্রাম: টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘটে সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রাম নগর থেকে বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ কার্যত বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া নগরের অভ্যন্তরেও রিকশা ও কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলছে না।
এতে সকাল থেকে স্কুল, কলেজ ও অফিসগামী সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। কিছু দূর রিকশা কিছু দূর হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেছেন নারী-পুরুষ। এ জন্য তাঁদের গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ, তিন গুণ রিকশাভাড়া।
সকাল নয়টায় নগরের কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু এলাকায় দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই চাকরিজীবী। চট্টগ্রাম নগর থেকে পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় যাওয়ার জন্য তাঁরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু কোনো বাস, ট্রাক, পিকআপ, হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছিল না।
পটিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, ‘প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো গাড়িই পাচ্ছি না। স্কুলে কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।’
নগরের বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা এবং বিভিন্ন উপজেলার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়েনি। নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে হাটাহাজারীর একাংশ ও রাউজান এবং রাঙ্গুনিয়ার উদ্দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পো ছাড়েনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিরা, ফৌজদারহাট ও ভাটিয়ারি এলাকায়ও পরিবহন শ্রমিকেরা যান চলাচলে বাধা দেয়।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোথাও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাইনি। ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটছে। তারা বিভিন্ন স্থানে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদের নিষেধ করছি।’
সিলেট: পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে সিলেটেও। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল ও সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্টেশন থেকে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। নগরের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে চলাচল করলেও সেগুলোও পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ছে। যাত্রীদের বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
mongsai79@gmail.com

Comments