বান্দরবানে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার ও ক্লিনিকগুলোতে বেড়েছে দেশের বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের (এমআর) দৌরাত্ম্য। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম।
বান্দরবান সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশ মুখে এমআরদের মোটরসাইকেলের সারি। কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে, কেউ বারান্দায় আবার কেউ কেউ চিকিৎসকের চেম্বারে। হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা এমআররা ভিতর থেকে ডাক্তার দেখিয়ে রোগীরা যখন ডিসপেন্সারির সামনে আসেন ঔষধের জন্য, ঠিক তখন শকুনের দলের মত রোগীর হাত থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে কার আগে কে দেখবেন প্রযোগিতা পড়ে যায় এমআরদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, প্রেসক্রিপশনগুলো চেক করছেন আর মোবাইলে সে প্রেসক্রিপশনে লেখা ঔষধের নামগুলো ছবি তুলে রাখছেন। এতে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সীমাহীন ভোগান্তির বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মচারী জানান, প্রতিদিন সকাল থেকেই শকুনের দল এসে হাজির। রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসলেই এমআরদের মধ্যে শুরু হয় প্রেসক্রিপশন দেখার প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের অচ্যারের শিকার হচ্ছেন।
এদিকে হাসপাতালে গিয়ে আরও দেখা যায়, ভিতরে প্রবেশের সময় রোগীদের কোন সমস্যায় পরতে না হলেও চিকিৎসকদের চেম্বারের ভিতরে রোগীর চেয়ে এমআররের সংখ্যাই বেশী দেখা গেছে। আর রোগীরা ভিতর থেকে বেরিয়ে ডিসপেন্সারির সামনে আসলেই ১০ থেকে ১২ জন এমআর গাদাগাদি করে রোগীদের হাত থেকে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকেন।
এদিকে হাসপাতালে গিয়ে আরও দেখা যায়, ভিতরে প্রবেশের সময় রোগীদের কোন সমস্যায় পরতে না হলেও চিকিৎসকদের চেম্বারের ভিতরে রোগীর চেয়ে এমআররের সংখ্যাই বেশী দেখা গেছে। আর রোগীরা ভিতর থেকে বেরিয়ে ডিসপেন্সারির সামনে আসলেই ১০ থেকে ১২ জন এমআর গাদাগাদি করে রোগীদের হাত থেকে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকেন।
তারাছা এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মালেহা বেগম নামে এক রোগীর অভিভাবক জানান, আমার মেয়েটা এমনিতেই অসুস্থ, এর মধ্যে এমআরদের প্রেসক্রিপশন টানাটানি। ডাক্তার বাবুর ওখানে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বের হতে পারছি এরমধ্যে ৯ থেকে ১০ জন মানুষ ডাক্তারের দেয়া কাগজ নিয়ে টানাটানি করে। এতে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বিভিন্ন ফার্মেসীতে চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে মোটর সাইকেল নিয়ে অবস্থান করে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। এবং চেম্বারগুলোতে ঢুকে লাইন ধরে চিকিৎসকদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকেন, রোগীদের প্রেকসক্রিপশনে কোন কোম্পানীর ঔষধ লিখছেন চিকিৎসক। ফলে রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়।
অভিযোগ আছে, ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা নিজেদের ঔষধ রোগীদের প্রেসক্রিপশনে রিখে দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও উপহার দিয়ে থাকেন। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই অনেক চিকিৎসক এম আরদের চাপে পড়ে তাদের কোম্পানীর ঔষধ লিখে দিতে হয়, সেই ঔষদের তালিকায় এমনও ঔষধ থাকে যা স্থানীয় ওষধের দোকানে গিয়েও পাওয়া যায়না।
হাসপাতালের ডিসপেন্সারির সামনে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের অপেক্ষায় থাকা রিদোয়ান নামে এক ব্যক্তি নিজেকে এরিষ্টো ফার্মা ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি (এমআর) পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা ডাক্তারের লিখে দেয়া রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখি ও এগুলো ছবি তুলে রাখি মূলত আমাদের কোম্পানীর ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন তাদের নির্দেশে। এতে রোগীরা দুর্ভোগে শিকার হন জানি, কিন্তু চাকরি বাঁচাতে আমাদেরও উপরের নির্দেশ মানতে হয়।
অন্যদিকে হাসপাতালের বারান্দায় আবাসিক মেডিকেল অফিসার স্বাক্ষরিত এক “আদেশ” বিজ্ঞপিতে দেখা যায়, ঔষধ বিক্রয় প্রতিনিধিগন প্রতিদিন হাসপাতালের ডিসপেন্সারির সামনে ভীর করে থাকেন, ফলে রোগীদের ঔষধ প্রদানে সমস্যা হয় এবং ডাক্তারদের লিখিত টিকিট নিয়ে ছবি তোলার অভিযোগ করেছেন অনেক রোগী। তাই বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিগনকে ডিসপেন্সারির সামনে, হাসপাতালের আঙিনায় এবং ভিতরে ভির করে রোগীদের টিকেট নিয়ে কোন ছবি না তোলার জন্য বলা ছিল ওই নোটিশে।
এ ব্যাপারে বান্দরবান সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. অংশৈপ্রু বলেন, এরকম অভিযোগ আমি এর আগেও পেয়েছি। এ সংক্রান্ত নোটিশও দেয়া হয়েছে। মাধ্যমে ও বলা হয়েছে। তারপরও যদি ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিগন সংশোধন না হয়ে থাকে, তাহলে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা।
mongsai79@gmail.com
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment