পাহাড়ে ৬৪ বছরের জমে থাকা কান্না প্রধানমন্ত্রী কি থামানোর উদ্যোগ নেবেন?

02ab7f6113608b8eec1674b4f804b1cb.png

মোঃ মাহমুদ হাসান :  “আমরা পাহাড়কে মনে করি মা, আমরা মায়ের দুধ খাই; কিন্তু তোমরা বাঙ্গালীরা মায়ের শরীরের মাংস খুবলে খুবলে খাও।“-২০০৩ সালে কথাটি বলেছিলেন, শুভ মঙ্গল চাকমা নামে একজন অশিক্ষিত মানুষ; যার বসবাস রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার বরকল ইউনিয়নের দেওয়ান চর মৌজার “ফালিটাইঙ্যা চুগ” আদামে (পাড়ায়)। প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত্য, রাজপথ হতে এয়ার-কন্ডিশনড কক্ষের সভা-সেমিনার পর্যন্ত্য আমার জীবনে যত শিক্ষক পেয়েছি, তাদের সবার চেয়েও বেশি শিখেছি আমি এ অশিক্ষিত পাহাড়ীটির কাছে ৯ মাসে ৪৫ হতে ৫০ দিনের সাহচর্যে; আমার কাছে তার কাছ থেকে অর্জিত শিক্ষার গুরুত্ব আমার পিতার কাছ থেকে শিক্ষার পরপরই। শুভ মঙ্গল দাদার কাছে অমার প্রশ্ন ছিলো, “চলন্ত বাস হতে হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনীয়ায় কোদাল দিয়ে পাহাড়ের ঢাল কুপিয়ে আদা চাষ করা হচ্ছে, কিন্তু, আপনারা শুধু দা-এর আগা দিয়ে একটু খোচা দিয়ে বীজ বুনেন কেন? কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বীজ বপন করলে ফলন বেশি হতো।“ তিনি প্রত্যুত্তরে উপরোক্ত কথাটি বলেছিলেন। বয়সে আমার চেয়ে ২০ বছরের বড়, তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন যে মানুষটি, তিনি মাত্র দুদিনেই হয়ে গিয়েছিলেন আমার পরম বন্ধু, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, অথচ সামান্য জুম চাষের বাইরে তার সামান্য একটু বাড়তি আয় ছিলো, বরকল বা শুভলং বাজারে গেলে পাহিস্তান টিলা ক্যাম্পে কর্মরত সৈনিকদের ফরমায়েস মতো কিছু কিনে এনে দেয়া, বিনিময়ে একসময়ে দু-এক পয়সা হতে শুরু করে সর্বশেষ দু-চার টাকা পাওয়া। পাহিস্তান টিলা নামটি জাতির জন্য শুধু লজ্জাই নয়, প্রতিবার উচ্চারনে জাতির জন্য চপেটাঘাতও বটে, তবু এটা পরিবর্তন হয় না, পাহাড়ের প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের চরম উদাসীনতার প্রমাণ রেখেই নামটি চলছে। শুভমঙ্গল দাদা জীবনে মুক্তিযুদ্ধ, সন্তুষ, গুন্ডুষ সবই দেখেছেন, কিন্তু পাহিস্তান টিলা ক্যাম্পের লাগোয়া ঘর হওয়াতে তাকে নীরব থাকতে হয়েছে আজীবন, এসব বিষয়ে। তিনি আরো যোগ করেছিলেন, “আমরা যেখানে জুম চাষ করি, গাছের ডালগুলি কাটি, কিন্তু, গাছটা রেখে দেই, যাতে মাটি ও পাথর সরে না যায়; কিন্তু তোমরা বাঙ্গালীরা যেখানে গাছ কাটো, শেকড়টা পর্যন্ত্য তুলে ফেলো, তুমি রউচান-রাঙুনীয়াতে যেসব আদা বাগান দেখেছো, সেসব আদা বাগানের সবগুলির ফসল ঘরে যাবে না, আরো ৮/৯ মাস তো এই রাস্তায় চলাচল করবে, দেখো।“ এ কথার সত্যতা কদিন পরেই দেখেছি, পাহাড়ে ধ্বস নেমে আদা বাগান উধাও। এটি একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ মাত্র। 

মধ্যযুগীয় বর্বরতার অভিশাপের কাল আমলে না নিলে বাংলাদেশের পাহাড়ে কান্নার সৃষ্টি কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের দরুন সৃষ্ট কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদে বাড়ি-ঘর; চেঙ্গি, মেয়নী, কর্ণফুলি নদীতীরের ফসলী সমতল জমি; দোকান, স্কুল, কেয়াং, হাট-বাজার, দোকানপাট ডুবে যাওয়ার পর কোন ক্ষতিপূরণ না দেয়ার মধ্য দিয়ে। যা দিনের পর দিন বেড়েছে, আর দগদগে ক্ষত ও ঘায়ের সৃষ্টি করা হয়েছে ১৯৭৬-৯৬ এ। আইএসআই-সিআইএ মনোনীত শাষকদের সময়ের বর্বরতাগুলি এখন মাঝে মাঝে কেউ বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তপনার বিষয়গুলি আমলে ও স্মরণে নেই কারোই। ১৯৭৭ সাল হতে ১৯৯১ পর্যন্ত্য চারটি শিক্ষা বোর্ড ও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণীর অর্থনীতি ও পৌরনীতি/রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে আমাদের পাকি বুদ্ধিজীবি শ্রেণী (যারা এখন সমাজে ছুতিয়া শীল হিসেবে পরিচিত) দুটি পরস্পরবিরোধী বিষয় সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করতেন, লিখতেন এবং পড়তে ও পড়াতে বাধ্য করতেন। (১) বনসম্পদ বিষয়ে এরা একই বইয়ে লিখেছেন ও সিলেবাসে রেখেছেন “একটি দেশের জন্য কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার, অথচ আমাদের দেশে আছে মাত্র ১৬ শতাংশ বনভূমি, তাই আমাদের বনভূমি বাড়ানো দরকার।“ (২) এরাই আবার ভূমির ব্যবহার বিষয়ে একই বইয়ে লিখেছেন ও সিলেবাসে রেখেছেন, “আমাদের দেশের এক-দশমাংশ ভূমিতে এক শতাংশ মানুষ বসবাস করে, তাই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হতে মানুষ স্থানান্তর করে অনাবাদী পার্বত্য এলাকা আবাদ ও মানুষের বসবাসের সংখ্যার ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। আইনানুযায়ি সাবালক হওয়ার পূর্বেই এ বিষয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জবাব পেয়েছিলাম “বেশি বোঝ, না? যা বইয়ে আছে, তা শিখো।” রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষের কাছেও এর সদুত্তর পাইনি। নেতা মেনে শ্রদ্ধা করা রাজনীতিবিদরাও এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে লড়াইটা থামাইনি। দূর্ভাগ্যবশতঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সুযোগ পেয়ে বেকুবের মতো লান্ড্রি (বিদেশ হতে আসা পুরাতন কাপড়) শার্ট-প্যান্ট ও স্পঞ্জের স্যান্ডেল পায়ে নিয়েই ঢুকে যেতাম রথী-মহারথী অধ্যাপকদের কামরায়; এরশাদের চামড়া তোলার কোন মিছিল না থাকলেই। ১৯৮৪ হতে এককভাবে এ লড়াইটা করলেও দীর্ঘ ৭ বছরে ফল হয়; স্যাটেলারীকরন-তত্ত্ব জায়েজ করার বিষয়টি নীরবে বিদায় হয় পাঠ্যপুস্তক হতে।  

পাহাড়ের কান্নার কারন কেউ জানতে চান না, যে দুচারজন জানেন, তারা সাহস করে বলতে চান না। পাহাড়ের কান্না বিষয়ে বই-পুস্তক পড়ে ও নিজ বিবেক-বিবেচনাবোধ হতে যা বুঝেছিলাম, ডেঙ্গু জ্বরে শারিরীক সামর্থ্যের দিক থেকে ও মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে পাহাড়ে যাওয়ার পর  তা আরো সমৃদ্ধ হয়েছিলো বটে, কিন্তু, সাহসের অভাবে সেসব বলতে, লিখতে পারিনি আমিও। এখন হার্টের রোগী, এর উপর জঙ্গি-রাজাকার-মাফিয়া-ইয়াবার বিরুদ্ধে লড়াইটাও একাই চালিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে জানা বিষয়গুলিও তুলে ধরার সাহসের অভাব আমার মধ্যেও আছে। কেউ কি ভাবেন, পাহাড়ের গাছ কোথায় গেল? পাহাড়ে ভূমিধ্বসই বা কেনো? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর যদি কেউ জানতে চান, তবে আপনাকে বেকুব সেজে যেতে হবে দাউদকান্দি ঘাটে বা মেঘনা ঘাটে যেসব টোল আদায়কারিরা ১৯৭৬-৯৬ টোল আদায় করতেন, তাদের বাড়িঘরের আশেপাশে চায়ের দোকানে আড্ডায়। পাহাড় হতে গৌরিপুর হাজারো রকমের চেকপোষ্টে কর্মরতদের কাছে কখনোই কোন উত্তর মেলেনি, মিলবেও না। 

আরেকটি বিষয় স্মরণ করা যেতে পারে, নিজামী-সাকাদের শাষণামলে পাহাড়ে একটি বড় রকমের ভূমিকম্প হয়েছিলো, রাষ্ট্র যেটিকে আমলে নিতে চায়নি, ১৯৯১ এর  জলোচ্ছাসের মতো স্বীকারও করতে চায়নি। এই ভূমিকম্পের ফলে পাহাড়ে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিও প্রকাশ করানোর এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই ভুমিকম্পের উৎপত্তিস্থলটি (ডলুছড়ি) রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকার করানোর দায়টিও কাধে নিয়েছিলো এক বেকুব। যদিও ডলুছড়ির কাছাকাছি কলাবুনিয়া ও গোরস্থান বাজার পর্যন্ত্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের পদধুলি দেয়া ছাড়া আর কোন সমীক্ষা বা ভবিষ্যৎ ঝুঁকি নির্ধারন ও করণীয় কিছুই করা হয়নি। বরং কোন্ বেকুব কলাবুনিয়া হতে আরো ভিতরে গিয়ে খবরটি সচিবালয় পর্যন্ত্য পৌছালো, তার গোয়েন্দা অনুসন্ধান চলে বেশ কয় মাস। ঐ ভূমিকম্পের পর ফালিটাইঙ্গ্যা চুগের অশিক্ষিত, এমনকি হাতের আঙুলগুলি পর্যন্ত্য বিকৃত থাকা পঙ্গু শুভমঙ্গল চাকমা মন্তব্য করেছিলেন, এই ভূমিকম্পের ফল অনেকদিন থাকবে, আমরা আর শীত মৌসুমে ঝরণার পানি পাবো না। এই অশিক্ষিত প্রকৃত আদম সন্তানটির ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিলো ভাদ্র মাস আসতেই। পাহিস্তান টিলার সৈনিকেরা আর শুভমঙ্গল চাকমার বাড়ির পাশের ঝরণায় পানি পান না, তাদের নামতে হয় অন্ততঃ দেড় মাইল নীচে ডাকভাঙ্গা ঘাটের কাছাকাছি; সে সময়ে বেশ কিছু ক্যাম্পে হেলিকপ্টার দিয়েও পানি সরবরাহ করতে হয়েছিলো। কিন্তু, পাহাড়ে বসবাসকারি আদম সন্তানেরা পানি পাচ্ছে কিনা, এ দায় রাষ্ট্র কেন নিবে? পাহাড়ের আদম সন্তানেরা আর কতজন? এদের তো মাত্র তিনটি সংসদীয় আসন, এদের জীবন বাচানোর দায় তো রাষ্ট্র নেয়ার প্রশ্নই আসে না। আর কেনই বা রাষ্ট্রের জনগণের উপার্জিত টাকায় লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে এয়ার কন্ডিশন্ড রুম পাওয়া বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা কোথাকার কোন পাহাড়ের আদম সন্তান বছরে ৮ মাস পানি পেলো না, এসব ফালতু বিষয় নিয়ে ভাববেন? তাদের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু তো হবে ডেভিড বার্গম্যান গভর্ণর হচ্ছে নাকি মার্শা বিবি? প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হলেই রাষ্ট্রের জনগণের মঙ্গলের কথা ভাবতে হবে, এটা কোন কেতাবে লেখা আছে? এমন যখন আমাদের রাষ্ট্রের কর্ণধারদের ও সমাজের বিবেকবানদের ভাবনা, তখন পাহাড়ের দগদগে ঘা হতে পঁচা মাংস খুলে খুলে পড়বে, আর তাতে শ’দুয়েক পোকামাকড় মরে গেলে কার বা কি আসে যায়? এরপরেও কিছু মানুষ আদম সন্তানের অপমৃত্যুতে নীরব থাকে না, কিছু না কিছু যার যার মতো প্রতিবাদ করে, অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। পাহাড়ে জমে থাকা কান্না বিস্ফোরিত হয়ে প্রায় শ’দুয়েক আদম সন্তান নিহত/নিখোঁজের ফলে ফেসবুকে এসেছে বেশ কিছু স্ট্যাটাস ও কমেন্ট; এমনি কিছু এ লেখায় তুলে ধরা হলো।             
  
সাংবাদিক মিঠুন চাকমার ১৪.০৬.২০১৭ সকাল পৌনে ৮টার স্ট্যাটাসঃ “প্রকৃতি সর্বংসহা হতে পারেনা। প্রকৃতিকে 'নিপীড়ন'এর প্রাকৃতিক প্রতিশোধ পাহাড় ধ্বসে মৃত্যু। যেন ভুলে না যাই।“

মার্কিন প্রবাসী শ্রমিক, খ্যাতিমান সাহিত্যিক রীতা রায় মিঠুর ১৩.০৬.২০১৭ রাত সাড়ে আটটার স্ট্যাটাসঃ “জানতাম এমন কিছু ঘটবে। সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল মানুষ, প্রকৃতি সইবে আর কত!”
আব্দুর রাজ্জাক এর কমেন্টঃ “এটা মানুষের সৃষ্টি দি। পরিকল্পনার অভাবে জীবন গেলো। প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। মহামরি, তুফান, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প (ম্যালথাসবাদ তত্ব)”।

পাহাড়ের লেখক প্রিয়াংশু চাকমার ১৩.০৬.২০১৭ রাত পৌনে এগারোটার স্ট্যাটাস-যে স্ট্যাটাসটি অসংখ্য ফেসবুকার শেয়ারও করেছেনঃ “রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধ্বস কেন হবেনা? পাহাড় ধ্বস হওয়াটাই স্বাভাবিক। না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বাড়ি বানালেই পাহাড় কাটতে হয়! কেউ কেউ বাড়ি বানানোর আগেই পাহাড় কেটে ফেলে রাখে। বাড়ি বানানোর জায়গায় গাছ থাকলে সেই গাছও কেটে ফেলা হয়। এসব করে করে পাহাড় ধ্বস হবার জন্য সেই জায়গাটাকে সম্পূর্ণ তৈরি করে দেয়া হয়। প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ করলে প্রকৃতির সেই ক্ষতিকর প্রভাব অবশ্যই পড়বে। এতে এসব কিছুকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে চালিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আপনারা কি কোনদিন শুনেছেন যে পাহাড় ধ্বসে ম্রো-দের বাড়িঘর ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে? আমার কানে কোনদিন আসেনি এমন খবর, আমি কোনদিন শুনিনি। ম্রো-রাও পাহাড়ে থাকে। তারাও পাহাড়ের ঢালে বাড়িঘর বানায়। বান্দরবানের পাহাড়ের ঢালে ম্রোদের শতশত বাড়ি। কিন্তু তাদের বাড়িঘর কখনো পাহাড় ধ্বসে ভেঙে পড়েনা। ম্রোদের সংসার কখনো পাহাড় ধ্বসের কারণে ধ্বংস হয়না। কেন পাহাড়ে থেকেও, পাহাড়ের ঢালে বাড়িঘর করেও ম্রোদের পাহাড়ি গ্রামে পাহাড় ধ্বস হয়না? কারণ আছে ভাই। অনেক গভীর এবং মূল্যবান কারণ আছে। পাহাড়ে ম্রো জাতি প্রকৃতি বোঝে। তারা প্রকৃতির ধর্ম বোঝে। প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করলে এর পরিণতির পরিমাণ বোঝে। ম্রো জাতি পাহাড়ের ঢালে বাড়ি বানানোর জন্য কখনো পাহাড় কাটেনা। পাহাড়কে অক্ষত রেখেই পাহাড়ে বসবাস করার সবরকম ধারণা তারা রাখে। পাহাড়ের বুকে বাস করে কিভাবে পাহাড়কে ভালোবাসতে হয় তারা জানে। যার কারনে প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব তাদের সম্মুখীন হতে হয়না আমাদের মতো। অথচ, আমরাই ম্রোদের বাড়িঘর দেখে বিরূপ মন্তব্য করে বসি। বলি, এরা কবে ‘সভ্য’ (!) হবে? কিন্তু সভ্যতা কী জিনিস? তথাকথিত রংচটা নাগরিক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এর সামনে দাঁড়িয়ে আমরা উপলব্ধি করি- সভ্যতা কী?”
প্রশান্ত ত্রিপুরার কমেন্ট: “আমার ধারণা ম্রোরাও ভূমি ধ্বসের শিকার হচ্ছে, হবে, যদি উন্নয়নের উননব্বই ঘা তাদের ছুঁয়ে থাকে এর মধ্যে। যেমন ফায়ারিং রেঞ্জের নামে দখলিকৃত নিজেদের প্রাক্তন জুমভূমিতে দখলদারদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছে, এমন ম্রোদের একটা বসতি দেখেছিলাম বান্দরবানে যেটি যেনতেনভাবে সাজানো!”
কমেন্টের উত্তর: “ম্রো-রাও এখন শহরমুখী হচ্ছে। তারাও তথাকথিত রংচটা নাগরিক সভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। শহরে বসবাস করা ম্রো-দের এখন মার্মা মাকি ম্রো বোঝা যায়না।“

জ্যোতি চাকমা এর কমেন্ট: “রাঙ্গামাটি পুরো শহরের পাহাড়ের মাটি বেশির ভাগ নরম প্রকৃতির। যখন বৃষ্টি হয়, তখন মাটির মধ্যে পানি ঢুকে ভিতরের মাটি আরো নরম করে তোলে, তখন আর বিল্ডিংএর মতো ভার সহ্য করার ক্ষমতা থাকেনা। >রাঙ্গামাটির মাটি নরম বলে কি বিল্ডিং তৈরি করবেনা? অবশ্যই করবে, কিন্তু তা যেন ইঞ্জিনিয়ারের ডিজাইন এবং মতামত অনুসারে ভিত্তি তৈরি হয়। রাংগামাটি শহরে অনেক একতলা বাড়ির ভিত্তি বা ছাদ ছাড়া বাড়ি তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র মিস্ত্রী দিয়ে। >ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে রাঙ্গামাটি ভুমিকম্প প্রবণ এলাকা, রাঙ্গামাটি শহরে লেকের পাড় দখল করে পাড় ভরাট করে তোলা ৪/৫ তলা বিল্ডিংগুলোও অপরিকল্পিত। একটু বেশী মাত্রায় ভুমিকম্প হলে এগুলো ধ্বসে পড়তে পারে।“

দিবাসন চাঙমার কমেন্টঃ “রাঙ্গামাটি শহরে আজ এই মৃত্যুপুরী হওয়ার একটাই কারন, গ্রামের মানুষ শহরমুখী হয়ে পাহাড় কেটে বাড়ি বানানো। মানুষ পাহাড় কাটবেই না বা কেন? আজ যদি তাদের বাপ দাদার ভূমি থেকে বিতাড়িত না হতো, তাহলে কি তারা শহরমুখী হয়ে পাহাড় কাটতো? কাটতো না। গ্রামে কি কখনো শোনা গেছে পাহাড় ধ্বসে মানুষ মারা গেছে? না, কখনো শোনা যায়নি। আমরা পাহাড়ীরা পাহাড়ের কোলে বাড়ি বানাতে জানি, কিন্তু এখন জানিনা কি জন্য? তার একটাই কারন, আজ আমরা ভূমিহারা, সেই আশির দশক থেকে সেটেলারিজমের কারনে।“

কৌশিক ব্যানার্জীর কমেন্টঃ “ভারতেও এই বিপদ ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ভবিষ্যতে আরো আনতে চলেছে। প্রকৃতির ওপর আমরা লুটেরার লোভ নিয়ে, ধর্ষকের প্রবৃত্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ফল যা হবার হয়ে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স ও দার্জিলিং পাহাড়ের অবস্থা শোচনীয়।“

তাহমিনা আমীরের কমেন্টঃ “আধুনিক বিজ্ঞান মানুষ কে বেশি কমফোর্ট দিয়ে বেশি লোভী করে দিছে।“

নায়লা জাহান আনা এর কমেন্টঃ “আধুনিক বিজ্ঞানের দোষটা কই এখানে? নরওয়ে পুরো দেশটাই পাহাড়ের ওপরে বলা যায়। পাহাড়ে থেকেও এরা কি আধুনিক বিজ্ঞানের সুযোগ সুবিধা আমাদের চেয়ে বেশি ভোগ করছে না?”

ঈশিকা জাহান ইরার কমেন্টঃ “এদের তথাকথিত সভ্য হওয়ার দরকার নেই দাদা।
প্রকৃতির বুকে এমন সন্তানের দরকার আছে।“

প্রদীপ্ত সূর্য এর কমেন্টঃ “সভ্যতার উৎকর্ষতায় পৃথিবী যখন এগুচ্ছে, আর আমরা পেছাচ্ছি। অন্য দেশে প্রকৃতির কোন প্রকার ক্ষতি না করে নিজেদের উন্নত করছে, আকৃষ্ট করছে অন্যদেরকে প্রকৃতিকে দেখার জন্যে, আর আমরা নষ্ট করছি প্রকৃতিকে। প্রকৃতির প্রতিশোধ বড়ই নির্মম। আফসোস, এই নির্মমতায় যারা বলি হয় তারা নিতান্তই ছা-পোষা সাধারন মানুষ। রাঘব-বোয়ালদের আজ পর্যন্ত কোন ক্ষতি হয় নি, হবেও না।“ 

নিকোলাস চাকমার ১৪.০৬.২০১৭ বিকাল তিনটার স্ট্যাটাসঃ “রাজা/নেতার দোষে প্রজার কষ্ট অয়, আমা পার্বত্য জেলাত উ সে হধাগান অমূলক নয়।“ (মর্মার্থঃ “রাজা/নেতার  দোষে প্রজা কষ্ট পায়, আমাদের পার্বত্য জেলাগুলিতে কথাটা অমূলক নয়।“)

সাহিত্যিক-সাংবাদিক সৈয়দ মামুনূর রশীদ এর ১৩.০৬.২০১৭ বিকাল ৫.৪৯এর স্ট্যাটাসঃ “পাহাড়ধস একটি মারাত্মক ভয়াবহ দুর্যোগ। এধরণের দুর্যোগে উদ্ধার তৎপরতা অত্যন্ত কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এটি একধরণের প্রকৃতির প্রতিশোধও বটে। পাহাড়ের প্রতি মানুষের অত্যাচারের প্রতিশোধ। রাঙামাটি, বান্দরবন ও চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড়ধসে ৪৯ জন নিহত হয়েছে। আসুন, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে দ্রুত সরিয়ে নিই মানুষের বসতি। পাহাড় কাটা বর্জন করি। আইনে পাহাড় কাটা, টিলা কাটা হত্যা মামলার শাস্তির সমান শাস্তি আরোপ করা হোক। পাহাড় কাটলেই ফাঁসি।“

একজন প্রকৃত মুজিব সৈনিক, যিনি কাউয়া লীগের বর্বরতম নির্মমতার শিকার- ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়া ও পোলিং এজেন্ট হওয়ার অপরাধে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো মানবেতর জীবনযাপনকারি গোবিন্দগঞ্জের গৌতম কুমারের ১৪.০৬.২০১৭ বিকাল পাঁচটার স্ট্যাটাসঃ  “বিশ্বনেত্রী ও জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা সদয় দৃষ্টি দিন.........। আপনি ছাড়া পাহাড়ের কান্না থামবে না। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনগনের জন্য আপনি ক্ষমতায় থাকার হ্যাট্রিক অর্জন করবেন-এ আশায় জাতি অপেক্ষমান। আপনার অবদান চিরঞ্জীব, আমরা ভুলতে পারব না। ১৯৯৮ সালে আপনার দৃঢ় ও সাহসী পদক্ষেপে চিরতরে শান্তির অন্বেষণে বীর সন্তু লারমারা অস্ত্র জমা দিয়েছিল। আপনি আন্তর্জাতিকভাবে ভূয়সী প্রশংসা অর্জণ করেছিলেন। শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার না পেলেও বাঙালি ও পাহাড়িরা আপনাকে ভালবাসার নোবেল পুরস্কার দিয়েছেন। দুঃখের সহিত আপনাকে জানাচ্ছি যে, এ বিরল অর্জনকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন পাহাড়ে কান্নার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছেই। কিছু দুস্কৃতিকারী বাঙালি ও পাহাড়িরা আপনার অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছেন। নিষ্পেষিত ও নিরীহ পাহাড়ী'র উপর অত্যাচারের ষ্টীমরোলার চলছেই। নয়ন নিহতকে কেন্দ্র করে নারকীয় তাণ্ডব চলার পরপরই বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বস। এ পর্যন্ত ১৩৮ প্রাণ ঝরে গেল। পাহাড় কারা কাটছে? চিরতরে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে না পারলে এ রকম প্রাণনাশ চলবেই। ঐতিহ্যমন্ডিত নৃগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাদের মুখে হাঁসি ফোঁটান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।“

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক এর ১৪.০৬.২০১৭ সকাল সাড়ে আটটার স্ট্যাটাসঃ “পাহাড়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৩৪। একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর অতিরিক্ত খাই খাই-এর কারনে আমাদের পাহাড়ি জনপদ এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব প্রভাবশালী জানোয়ারদের লোভের বলি হচ্ছে গরীব ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষগুলো। সত্যিই কি পাহাড় রক্ষণাবেক্ষন করার মত কোন কর্তৃপক্ষ নাই?”

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি প্রকৌশলী শরীফ নূরুল আম্বিয়ার ১৪.০৬.২০১৭ প্রথম প্রহর দেড়টার স্ট্যাটাসঃ “আমরা হতচকিত, শোকাহতঃ অবিরাম বৃষ্টি এবং ভূমিধ্বসের ফলে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অনেকে মৃত্যুবরন করেছেন। প্রাথমিক ধারনা ছিল ৯/১০ জন, যা মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছিলো গতরাতে, আজ রাতে তা পরিণত হয়েছে ১৩০+, আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সেনাবাহিনীর চারজন মারা গিয়েছে উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে। এটা সত্যি, আমরা এতোটা ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, আমরা হতচকিত হয়েছি এবং পরিশেষে শোক দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়েছি। বাস্তবে পার্বত্য এলাকায় দুর্যোগ চলছে, অনেক এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, দুর্গম পার্বত্য এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে বেশ সময় লাগবে, সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত সহযোগিতা অপরিহার্য। পার্বত্য এলাকার ভূমিধ্বস বন্ধ, প্রকৃতি, পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহল দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এটাই একান্ত কামনা।“

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থায় এক সময় কর্মরত এবং বর্তমানে বেকারত্বের দুর্বিসহ গ্লানি বয়ে বেড়ানো অভিলাষ ত্রিপুরার ১৪.০৬.২০১৭ সকাল সোয়া আটটার স্ট্যাটাসঃ “লংগদুর বেদনা কাটিয়ে না উঠতেই পাহাড়ে ভুমিধ্বসের কান্না। নিহত সকলের আত্মার শান্তি কামনা ও আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের প্রিয় পার্বত্যভূমিতে যেন আর কোন প্রানহানি আর কেউ ক্ষতির সম্মুক্ষীন না হন এ প্রার্থনা করছি। দল মত নির্বিশেষ সকলকে হতাহত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। মানবতার জয় হোক।“
প্রিয়কুমার চিজি এর কমেন্টঃ “জয় হোক মানব ও মানবতার,জয় হোক বিবেকের।“

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক প্রশান্ত ত্রিপুরা স্যারের ১৪.০৬.২০১৭ সকাল নয়টার স্ট্যাটাসঃ ["দুর্যোগের জন্য অপেক্ষা না করে রক্ত দিন, এখনই দিন, সবসময় দিন।" এটি হচ্ছে এ বছরের বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের স্লোগান। আজ সেই দিন। স্লোগানটির কথা আমি জেনেছি 'জুম্ম' স্বেচ্ছা-রক্তদাতাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'জুবদা'র সৌজন্যে, তারা আজ আমাকে তাদের একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর প্রেক্ষিতে। যথাযথ উপায়ে রক্ত সংগ্রহ করে যথাযথভাবে মজুত রাখা, যথাসময়ে তা কাজে লাগানো - এসব হল দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির একটি মাত্র দিক। এমন বহু প্রস্তুতি নেওয়ার আছে, বাংলাদেশে যেগুলির ঘাটতি সামনে চলে আসে, যখনই বিভিন্ন 'প্রাকৃতিক' বা স্রেফ মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় নেমে আসে। রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম এলাকায়ও হয়ত আজ তা দেখা যাচ্ছে। তবে প্রতিবারই সাধারণ জনগণের যৌথ শক্তি কিভাবে যেন সকল ঘাটতি পুষিয়ে দেয়। এখন, এই মুহূর্তেও নিশ্চয় দিচ্ছে। জনতার শক্তির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক। স্বেচ্ছাসেবার মনোভাব আরো ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সর্বস্তরে, বিপদের মুহূর্তে জাতি-ধর্ম-শ্রেণী-লিঙ্গ-দল-মত নির্বিশেষে সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়াতে থাকুক আরো বেশি করে। তা যদি হয়, তবে বাংলাদেশও নিশ্চয় একদিন জিতে নিতে পারবে বিশ্বকাপ - মানবতার বিশ্বকাপ!]

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রশান্ত স্যারের মতো আমিও আশাবাদী আপনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশও নিশ্চয় একদিন জিতে নিতে পারবে মানবতার বিশ্বকাপ! শান্তি চুক্তি হয়েছে দেড় যুগ পার হলো, আমার পর্যবেক্ষণ-পাহাড়ীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়া আর কিছুই হয়নি, গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র আমার এ কথায় ক্ষেপে উঠতে পারেন, কিন্তু কেউ ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না, শান্তিচুক্তির কোন ধারাটা বাস্তবায়ন করেছেন। শরীরের একটি অঙ্গে পচন রেখে শরীর সুস্থ থাকে না, এ কথাটি বিবেচনায় নিয়ে পাহাড় বাঁচান, পাহাড়ের আদম সন্তানগুলিকে বাচান, আপনার অর্ঝিত আন্তর্জাতিক পদকগুলি অরো মহিমান্বিত ও স্বার্থক হোক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বনেত্রী।  

মোঃ মাহমুদ হাসান (ভূতপূর্ব কলেজ অধ্যক্ষ ও সমাজ গবেষণা কর্মী), ঢাকা, তারিখ-১৫.০৬.২০১৭, সময়-বিকাল-০৫.৩৩।

Source মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments