ভারতের অরুণাচল রাজ্যের অধিবাসীদের তীব্র আপত্তি রয়েছে চাকমা এবং হাজং জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের নাগরিত্ব প্রদানের বিষয়ে। তারা কোনোভাবেই এ দুই জনগোষ্ঠীর বোঝা বইতে রাজি নয়। এ খবর জানিয়ে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠির প্রতিলিপি সংবাদমাধ্যমেও পাঠানো হয়েছে।
বিজেপি শাসিত রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যবাসীর আপত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও কেন্দ্রের চাপ উপেক্ষা করতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। রাজ্যের সব দল-সংগঠন চাকমা-হাজং শরণার্থীদের নাগরিত্ব দেওয়ার বিপক্ষে। এমন অবস্থায় শরণার্থীদের অরুণাচলের নাগরিক হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হলে কংগ্রেসের দল ভারী হবার শঙ্কাই বেশি। যার পরিপ্রেক্ষিতেই এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এত মানুষকে রাজ্যে পাকাপাকি বাসিন্দার মর্যাদা দেওয়া হলে ১৮৭৩ সালের ‘বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন অ্যাক্ট’-এর দুই ও সাত নম্বর ধারা অমান্য হয়। যেখানে বলা আছে, অরুণাচলের ভূমিপুত্র উপজাতিদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে বহিরাগতদের সেখানে জমির অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের অরুণাচলের সীমানায় ঢোকার ক্ষেত্রেও নিষাধাজ্ঞা রয়েছে।
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, দিল্লির বৈঠকেও আমি জানিয়েছিলাম রাজ্যবাসী তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ, সাংবিধানিক নিয়ম ভঙ্গ কিছুতেই মেনে নেবে না। চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দিলে তা রাজ্যের জনবিন্যাস, উপজাতি চরিত্রে আঘাত হানতে পারে। রাজ্য সরকারকে যে কোনোও মূল্যে উপজাতি স্বার্থ রক্ষা করতেই হবে। তাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক।
দেশটির নির্বাচন কমিশন ২০০৫ সালে চাকমাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে। ভোটার তালিকা থেকে এ শরণার্থীদের নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে রাজনাথ সিংহ অরুণাচলের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজ্জু এবং অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করেন। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তখন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী শরণার্থী হিসেবে অরুণাচলে বাস করা প্রায় ১ লক্ষ চাকমা এবং হাজংদের নাগরিত্ব প্রদানের বিষয়টি জানানো হয়। এ সময় মুখ্যমন্ত্রী শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিরোধিতা করেছিলেন। তখন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দিলেও জমির অধিকার দেওয়া হবে না।
নাগরিত্ব প্রদানের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অরুণাচল প্রদেশ ছাত্র সংগঠন রাজ্যজুড়ে ২০ সেপ্টেম্বর হরতাল ডেকেছে। হরতাল সম্পর্কে সংগঠনটির সভাপতি টোবোম দাই বলেন, ‘রাজ্যের মানুষের মতামতের তোয়াক্কা না করে এ ভাবে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার কারও নেই। ভূমিপুত্রদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা যে কোনো লড়াইয়ের জন্য তৈরি।’
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়া চাকমা-হাজং জনগোষ্ঠী দুটির শরণার্থী সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ২,৭৪৮টি পরিবারের ১৪,৮৮৮ জন চাকমা-হাজং শরণার্থী চাংলাং জেলার বরদুমসা ও পাপুম পারে জেলার কোকিলায় বসবাস শুরু করে। সর্বশেষ শুমারিতে তাদের মোট সংখ্যা ছিল ৬৪ হাজারের বেশি। বর্তমানে যা ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment