৬৪ হাজার স্কুলেই শিক্ষক পদ শূন্য

৬৪ হাজার স্কুলেই শিক্ষক পদ শূন্য
বগুড়ার মোকামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় শতভাগ শিশুই প্রতিদিন স্কুলে আসে। ছবি : ঠাণ্ডা আজাদ
শিক্ষক সংকটে ভুগছে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। এমনিতেই বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় প্রয়োজনীয় শিক্ষকের পদ নেই।
এর ওপর পদ শূন্য থাকায় শিক্ষকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়া। দেশে এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৬৪ হাজার। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ২১ হাজার বিদ্যালয়। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ১৭ হাজার। এ ছাড়া ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া ২৬ হাজার বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদ সৃষ্টির প্রস্তাবও দীর্ঘদিন আটকে আছে। ফলে এই ২৬ হাজার স্কুলে নেই প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষক। সব মিলিয়ে ৬৪ হাজার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ প্রায় ৬৪ হাজার শিক্ষকের পদই শূন্য রয়েছে।
জানা যায়, প্রধান শিক্ষক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করলেও সহসাই সেখান থেকে মুক্তির পথ মিলছে না। কারণ এ পদটি ইতিমধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে।
ফলে এখন এই পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির দায়িত্ব সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি)। পদোন্নতিতে এখনো জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরি করতে পারেনি অধিদপ্তর। আর নিয়োগেও ধীরগতিতে এগোচ্ছে পিএসসি। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য গত বছরের আগস্ট মাসে ৩৪তম বিসিএস থেকে ৮৯৮ জনকে সুপারিশ করে পিএসসি। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও সেই পদে সকলকে এখনো নিয়োগ হয়নি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্র জানায়, পদোন্নতি-সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে শূন্য আসনের ৩৫ শতাংশ নিয়োগের বিধান রয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শূন্য পদ সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। আগে এই পদটি তৃতীয় শ্রেণি হওয়ায় সরাসরি নিয়োগ দিত অধিদপ্তর। কিন্তু এখন দ্বিতীয় শ্রেণি হওয়ায় নিয়োগ দিতে হবে পিএসসিকে। কিন্তু তাদের পক্ষে কোনোভাবেই দ্রুততম সময়ে সাত হাজার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। আর ১৪ হাজার সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াটাও পিএসসির পক্ষে দুরূহ ব্যাপার। জানা যায়, সদ্য জাতীয়করণ হওয়া ২৬ হাজার বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের জন্য কোনো পদই নেই। প্রায় এক বছর আগে এসব বিদ্যালয়ে এই পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। এ ছাড়া প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিদ্যালয় মিলে এখনো ১৭ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আর যেসব স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই সেখানে একজন সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। আর এই দায়িত্ব নিতে গিয়ে তাঁর কর্মঘণ্টার বেশির ভাগ সময়ই কাটাতে হচ্ছে প্রশাসনিক কাজে। ফলে শিক্ষক সংকটে স্কুলগুলোতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পড়ালেখা।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ চর রহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২০ জন। শিক্ষকের মোট সাতটি পদ থাকলেও আছেন পাঁচজন। এর মধ্যে আবার প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষক আবুল খায়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে চারজন শিক্ষক দিয়ে চলছে লেখাপড়া। এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক দিল আফরোজা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম শ্রেণিতে ১১১ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে দুই শাখা করা যাচ্ছে না। তবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে দুটি শাখা রয়েছে। আমরা অনেক কষ্ট করে ক্লাস নিচ্ছি। কিন্তু একটি ক্লাসে যদি ১১১ জন শিক্ষার্থী থাকে, তাদের ৫০ মিনিটের ক্লাসে কী শেখানো যায়?’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বেশির ভাগ স্কুলেই শিক্ষক আছেন চারজন। এর মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। আবার অধিকাংশ শিক্ষক নারী হওয়ায় মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানাভাবে একজনের ছুটি থাকে। অনেক সময় একজনকেই চালাতে হয় বিদ্যালয়। ফলে দু-তিনটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একত্র করে পড়াচ্ছেন সহকারী শিক্ষকরা। অনেক স্কুলে কোনো রকমে দু-একটি ক্লাস করেই ছুটি দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে সিলেবাস শেষ হচ্ছে না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপাতত প্রধান শিক্ষকের সংকট কাটাতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর এই পদে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার দায়িত্ব পিএসসির। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষক পদে প্যানেল থেকে ২৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বাকি নিয়োগ প্রক্রিয়াও নিয়মিতভাবে চলছে। আর সদ্য জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়েও প্রাক-প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াও চলছে। পদ সৃষ্টি হলেই এসব পদে দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হবে। ’
Source অনলাইনে টাকা ইনকাম করতে চাইলে নিচে লিং এর সাইট থেকে রেজিস্ট্রেশ করে ইনকাম করুন https://www.bestchange.com/?p=367744 মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments