জীবন সংগ্রাম জীবনযুদ্ধে জয়ী মেশৈ

জীবনযুদ্ধে জয়ী মেশৈ
নিজ হাতে গড়া সেগুন বাগানে শার্লী মেশৈ প্রু মার্মা। ছবি: সমকাল

  সারোয়ার সুমন
শার্লী মেশৈ প্রু মার্মা। বান্দরবান সদরের পুরাতন চড়–ইপাড়ার সি টি প্রু ত্রিপুরা ও বারেক্যা মার্মার মেয়ে। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন মেশৈ। চার ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে তখন তার মায়ের দিশেহারা অবস্থা। পরিবারে অভাব থাবা বসালে মেশৈকে দিয়ে দেওয়া হয় এতিমখানায়। জীবনের কঠিন রূপ দেখতে থাকেন তিনি। 

কিন্তু দমে যাননি মেশৈ। চরম অনটনের মধ্যেও পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। পাস করেছেন স্নাতক ডিগ্রিও। এরপর হাল ধরেছেন পরিবারের। বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতা দিয়ে শেষ পর্যন্ত জীবনকে জয় করেছেন মেশৈ। টাকার অভাবে যে সংসারে দু'বেলা আহার জুটত না, সেই পরিবারই এখন স্বচ্ছল ও সুখী। কারণ মেশৈ এখন কোটিপতি।
কিভাবে এ অসম্ভবকে সম্ভব করলেন তিনি- সেটা তার মুখেই শুনি, 'বাবাকে হারানোর পর আমাদের পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। এরপরও হাল ছেড়ে দিইনি। উল্টো ভাই-বোন সবার পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। যোগ দিলাম স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ২০০০ সালে একটি এনজিও'র কাছ থেকে ঋণ নিয়ে হেডম্যানের সহায়তায় আমার ও স্বামীর নামে বান্দরবানে ১০ একর জমি বন্দোবস্ত পাই। এরপর সেখানে লাগাই ১০ হাজার সেগুন গাছ। এ সেগুন গাছই বদলে দিয়েছে আমার ভাগ্য। রোপন করা সেসব সেগুনের বাজার মূল্য এখন কোটি টাকারও বেশি। পাঁচ বছর পরে যার দাম দাঁড়াবে দুই কোটিতে।
জয়িতা সম্মাননা স্মারক হাতে মেশৈ। ছবি: সমকাল


জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া নারীদের দেওয়া জয়িতা সম্মাননাও জিতেছেন শার্লী মেশৈ প্রু মার্মা। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল তার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিরূপ পরিস্থিতিতে থেকেও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য এ সম্মাননা পান শার্লী মেশৈ প্রু মার্মা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছিলেন, সেগুন গাছ দিয়েই পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন তিনি। তার বাগানে অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। বাগান করার পাশাপাশি পোশাক তৈরি করে আড়ং, হ্যান্ডি ক্র্যাফটসহ বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানে বাজারজাত করছেন তিনি। বান্দরবান উইম্যান চেম্বারের পরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন মেশৈ। 
তিনি সমকালকে বলেন, এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ পেয়েছি পরিবারের লোকদের কাছেই। এক্ষেত্রে মা ও স্বামীর অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। 
ম্যা থিউ ও এনজেলা নামের দু'টি সন্তান রয়েছে শার্লীর। ম্যা থিউ পঞ্চম ও এনজেলা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। 
তবে আক্ষেপও রয়েছে মেশৈ মার্মার। তিনি বলেন, সরকার থেকে ১০ বা ২০ বছরের জন্য ঋণ পেলে বাগানটা আরও বড় করতে পারতাম। তাহলে নিজের তৈরি করা পোশাকের একটি শোরুম দেওয়ার স্বপ্নও পূরণ হতো। এখন ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া গেলেও, তারা সেটা দীর্ঘমেয়াদে দিতে চায় না। আদিবাসীদের ঋণ দিতে অনেক নথিপত্রও চায়।

বান্দরবান উইম্যান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি লালচানি লুসাই বলেন, জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক নারীর নাম শার্লী মেশৈ প্রু মার্মা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েও থমকে যাননি তিনি। বুদ্ধিমত্তা ও একাগ্রতার কারণে তিনি এখন সফল।
Source মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments